আমাদের রাহুল মামা – ৩

রাতে খেলা নিয়ে অনেক গল্প হল, আমাদের কোচ, সাকিব এক সময় ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার ছিলেন। ঘুমাতে ঘুমাতে ২ টা বেজে গেল, কিন্তু কাল স্কুল নেই। কাল থেকে ছুটি আর আজকের বিজয়, মামা বাসায়, কাল কি কি করব এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম।

বৃহস্পতিবার

আম্মুর অনেক ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল। আজ ছুটির দিনে এত সকালে ডাকার কি হল, কি জানি? চোখ খুলে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি বেলা ১১ টা যেখানে ১০ টায় মামার সাথে বাজারে যাবার কথা। সর্বনাশ! তাড়াতাড়ি বের হয়ে দেখি মামা আর ইমি আপু নাস্তা করছে। তারাও দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে। আমরা কি সত্যিই জিতেছি নাকি সিউর হবার জন্য টিভি অন করলাম, খুশিতে মন ভরে গেল। সব চ্যানেলে খেলার খবর, আরিফ হাসপাতালে, আগামী ১ মাস খেলতে পারবে না। আমার মনে হয় সবাইকে ৩ মাসের ছুটি দেয়া উচিত। প্রথম ওয়ার্ল্ডকাপ বলে কথা। সারা দেশে ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে।

মামা আর ইমি আপু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আম্মু আমাদের উঠতে দেরী দেখে “সপ-অন (Shop-On)[1] থেকে আম, জাম, কাঁঠাল এনে রেখেছে। সপ-অনে অর্ডার দিলে আমাদের আশেপাশের দোকানের মধ্যে যারা ভালো পণ্য কম দামে দিচ্ছে তারা অর্ডার পায়, দিন শেষে সবার বাসায় দিয়ে যায়, আর ৫ টাকা চার্জ দিলে সাথে সাথে। আম্মু সকালের নাস্তায় ফল দিবে তাই ৫ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে সকালেই নিয়ে এসছে। আমাদের আজ আর বাইরে যাওয়া হল না, এমনি আজ ছুটি, সব বন্ধ।

খেয়ে দেয়ে সবাই গত কালকের খেলা নিয়ে গল্প করছি। এর মধ্যে মামা আমাকে আর ইমি আপুকে বলল মোবাইল নিয়ে আসতে।

% স্কেচবুকটা বের কর। মন দিয়ে শোন তোদেরকে একটা ধাঁধা দিব, সন্ধ্যার মধ্যে যে আগে উত্তর দিতে পারবি তাকে আমি রিপুতে ২০ পয়েন্ট দিব। আর বুধবারের মধ্যে যে আগে ১০০ পয়েন্ট করতে পারবে তাকে নিয়ে পুরান ঢাকা ঘুরতে যাব। 

বলার সাথে সাথে মামা আমাদের রিপুতে “মিশন-পুরান ঢাকা” নামে গোল সেট করে দিল।

     # মামা, তাহলে তুমি আর আমি যাচ্ছি পুরান ঢাকা।

     * দেখা যাক, আগে দেখি আজ কে ২০ পয়েন্ট পায়?

% ধাঁধাটাই তো বলি নি। মনে কর,
আমাদের কাছে লিচু, আম এবং কাঁঠাল আছে। এখন এই ফলগুলো আমাদেরকে আলাদা আলাদা পাত্রে রাখতে হবে। কিন্তু শর্ত হল প্রতি পাত্রে একটির বেশি রাখা যাবে না। কাঁঠাল রাখার জন্য বড় ঝুড়ি(বালতির মত), আম রাখার জন্য জগের সাইজের ঝুড়ি আর লিছু রাখার জন্য গ্লাসের মত ছোট ঝুড়ি। এখন আমাদের কাছে ৩ ধরনের ঝুড়ি আছে বড়, মাঝারি আর ছোট।
কি এ পর্যন্ত ঠিক আছে ?

# একদম ঠিক আছে। আমার কাছে ৩ টি পাত্র আছে।

* মামা ঠিক আছে কিন্তু ধাঁধাটা কি, সেটাই তো বল নাই।

% শোন-
৩ টি পাত্র না, ৩ রকমের পাত্র। চাইলে আমরা এক আলমারিতে এমন ১০ টি বড় পাত্র অথবা ২৫ টি মাঝারি পাত্র অথবা ৪০ টি ছোট পাত্র রাখতে পারি। এখন আমাদেরকে ৫ টি আম, ১০ টি লিচু, ৫ টি কাঁঠাল রাখতে হবে। আর এগুলো রাখার পর কতটুকু জায়গা খালি থাকবে ?
আমরা কিন্তু চাইলে বড় পাত্রে কাঁঠাল, আম, লিচু সবই রাখতে পারি। এখন প্রশ্ন হল কোন ধরনের পাত্র কতগুলো নিব? সময় বিকাল ৫ টা। যে পারবে না তার জন্য একটা ৫ পয়েন্টের বোনাস প্রশ্ন থাকবে।

# মামা, উত্তর আমি এখনই বলতে পারি, ৫,১০,৫ মোট ২০ টি বড় পাত্র নিব, কাজ শেষ। হি হি …

* আরে বোকা, ঘরে ১০টার বেশি বড় পাত্র রাখা যায় না…

% ইমি, সাহায্য করা যাবে না, তাহলে কিন্তু সে পয়েন্ট পেয়ে যাবে। 

* ঠিক আছে মামা, কিন্তু ধাঁধার মধ্যেই উত্তর আছে। অনেক সহজ ধাঁধা হি হি…

২০ টি পাত্র নিতে না পারলে ১০ টি নিব, কিন্তু আমাকে আবার ২০টি ফল রাখতে হবে, সারা  দুপুর আমার এই চিন্তা করতে করতে কেটে গেল। মামা ক্লান্ত তাই আজ সারা দিন বিশ্রাম নিয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, একটু পর ৫ টা বেজে যাবে। আমি আর আপু মামার রুমে চলে গেলাম।

     # মামা, আমার উত্তর রেডি।

     * মামা, আমার টাও রেডি, কিন্তু কে আগে বলবে ??

     % চিন্তার বিষয়, তোরা স্কেচবুকে লিখে আমার সাথে শেয়ার কর।

     * সেটাই ভালো হবে।

আমি আর আপু আমাদের উত্তর লিখে মামাকে দিলাম। মামা তো আমাদের উত্তর পেয়ে হাসতে হাসতে শেষ।

% কাকে যে বিজয়ী বলি?

ইমির উত্তর আমরা যত সম্ভব ছোট পাত্র নিব, যেন বেশি ফল রাখতে পারি, তাহলে আমরা লিচুর জন্য ১০ টি ছোট  পাত্র, আমের জন্য ৫ টি মাঝারি পাত্র আর কাঁঠালের জন্য ৫ টি বড় পাত্র নিব। আর এই ২০ টি ফল রাখার পর আমাদের  কোন জায়গা ফাঁকা থাকবে না। এটা সে অংক করে দেখিয়েছে। একদম ১০ এ ১০। 

আর ইমুর উত্তর, আমরা ২০ টি বড় পাত্র নিব যেন যেকোন ফল রাখতে পারি। আর যেহেতু এক ঘরে ১০ টির বেশি বড় পাত্র রাখা যায় না, তাই আমরা ২ ঘরে ১০ টি করে ২০ টি পাত্র রাখব।
হা হা হা, ইমুকে তো ১০ এ ২০ দিতে হবে। হা হা হা।

কি হল বুঝলাম না, মামা বলছে আমার উত্তর হয়েছে আবার আপু আর মামা হাসছে!

# মামা বলেছিলাম না, এই ২০ পয়েন্ট আমার!

% না মামা, এই পয়েন্ট ইমির। আমাদের যা আছে তাই নিয়ে কাজ করতে হবে, আরেক ঘর পাব কোথায় ? আর ইমি এবার তুই ইমুকে বুঝাতে পারিস। কিন্তু তার আগে ৫ পয়েন্টের আরও একটি প্রশ্ন-

এখন কেউ যদি দুধ বা জ্যান্ত মাছ রাখতে চায়, তাহলে কিভাবে রাখবে? কে পারবি?

আমি আর ইমি আপু একসাথে হাত তুললাম –

  % ইমু আগে বলল-

# মামা, ঝুড়িতে তো আর দুধ রাখা যাবে না, এবার নতুন কিছু লাগবে । এটা একটি জগ হতে পারে। আর মাছ হলে ঝুড়িতে রাখলে সব পানি পড়ে যাবে, আর মাছটাও মারা যাবে, কিন্তু ঝুড়িতে মরা মাছটি থাকবে।

    % ইমি, তোর কি মনে হয় ?

    * মামা, ইমুর কথাই ঠিক

% ঠিক তাই। আমরা কি রাখব, তার উপর নির্ভর করে কেমন পাত্র নিব। আজকের বিজয়ী ইমি, সে ২০ পয়েন্ট পেয়েছে আর ইমু পেয়েছে ৫ পয়েন্ট। আজ সন্ধ্যা ৬ টায় আমরা একটু গল্প করতে বসব। আর ইমু হতাশ হবার কিছু নেই, আমাকে ঠিকমতো সাহায্য করলে তোকে আমি প্রতিদিন ১০ পয়েন্ট করে দিব।

আপু আমাকে অনেক কষ্ট করে বুঝাতে সক্ষম হল যে আমরা ছোট ছোট পাত্র নিয়ে ২০ টি ফল রাখতে পারব, কাঁঠালের জন্য বড় পাত্র আর লিচুর জন্য ছোট পাত্র। লিচুর জন্য বড় পাত্র নিয়ে লাভ নেই, কারন একপাত্রে একটি ফলের বেশি রাখা যায় না। ৬ টায় আবার মামার সাথে দেখা হবে, হয়তো নতুন কোন ধাঁধা দিবে। মামার ক্লান্ত ভাব এখনো আছে, তাই মামাকে আমরা বিরক্ত করছি না।


[1] সপ-অন (Shop-On) (কাল্পনিক) , আশে পাশের দোকান থেকে ঘরে বসে বাজার করা যায়।

কিছু ভিডিও- যা এই গল্পের বিষয় বস্তু বুঝতে সাহায্য করবে –

আরো গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published.