সন্ধ্যা ৬ টা
ঠিক ৬ টা বাজে আমি আর ইমি আপু মামার রুমে হাজির হলাম। মামাকে দেখে মনে হল মামা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।
% আয়, আয়, তোদের কথাই ভাবছিলাম। কি আমার সহকারী, কেমন চলছে ?
# জ্বী, আপাতত ভালোই চলছে। তবে মাথার মধ্যে এখনও কয়েকটা ঝুড়ি ঢুকে আছে, আর কোন ঝুড়িতে কোন ফল রাখব, চিন্তায় আমি শেষ! মাথার চারপাশে শুধু আম, কাঁঠাল, লিচু ঘুরে!
আমার কথা শুনে মামা আর ইমি আপু দুজনই হাসতে হাসতে একদম কাশি শুরু করে দিল।
% হা হা, তোকে আর ধাঁধা দেয়া যাবে না, ঠিক মত আমাকে সাহায্য কর। তাতেই পয়েন্ট পাবি।
* মামা, ওকে দিয়ে কছু হবে না, তার চেয়ে ভালো তুমি ওকে গেমজোনের হেটফ্রুট [1] গেমটা খেলতে দাও, সারাদিন মাথার চারপাশে যে ফলগুলো ঘুরে সেগুলো কাটাকাটি করুক। হি হি হি…
# মামা, কি শুরু করলা তোমরা??? চললাম আমি !
% আরে থাম থাম, আর ধাঁধা দিব না। তুই না থাকলে তো আমি বিপদে পড়ে যাব।
# কি যে বল, মামা!
* আরে মামা, ও চলে যাক, আমি আছি না! তোমার কোন চিন্তা নেই।
# মামা, আপুকে থামাও, আমি কিন্তু…
% আরে বাচ্চাদের মত কি শুরু করলি তোরা ? শোন মন দিয়ে এখন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, আর এই আলোচনা থেকে পরে প্রশ্ন করা হবে, পারলে ১০ পয়েন্ট।
# মামা, কি করতে হবে?
% কিছু করতে হবে না, শুধু মন দিয়ে শুনতে হবে।
# এবার তো আর কোন আম, জাম নেই??
* মামা ওকে একটা আম, জাম নিয়ে প্রশ্ন করবে, ঠিক আছে? হি হি…
# মামা, আবার শুরু করেছে-
% আরে থাম তো তোরা আমি ৫ টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, আর এ জন্য আমাদের সকালের ধাঁধা টি কাজে লাগবে –
* হি হি – জানতাম আমি! কিরে ইমু কত পয়েন্ট পাবি যেন ??
# শুনতে দাও, বিরক্ত করবে না ।
* ওরে বাপরে কত সিরিয়াস !!!
% আমরা দোভাষী দিয়ে শুরু করি, দোভাষীর কথা মনে আছে ??
* হুম মামা, কম্পাইলার। আমাদের কথা যেন কম্পিউটার বুঝে তাই আমাদের দোভাষী বা কম্পাইলার এর সাহায্য প্রয়োজন।
% ঠিক তাই। কিন্তু একটা মজার বিষয় কি জানিস? আমাদের এই কম্পাইলার সৌন্দর্য্য বুঝে না, আমরা যতই সুন্দর করে প্রোগ্রাম লিখি না কেন , প্রথমে সে সব খালি জায়গা বাদ দিয়ে দেয়, যেমন ট্যাব দেই, স্পেস দেই এই সব বাদ দিয়ে দেয়। এমনকি আমরা ইন্টার দিয়ে নিচে নিচে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখি, এক লাইনে একটা করে কাজ লিখি, সেই ইন্টার ও আমাদের এই কম্পাইলার বাদ দিয়ে দেয়।
# হে হে, মামা, এরপর তো এই প্রোগ্রাম পড়ে আর কেউ বুঝবে না। সবই এক লাইনে থাকবে।
* আরে বোকা, এইগুলো তো আর মানুষ দেখবে না, কম্পাইলার তো এগুলো কম্পিউটারকে দিবে। তাই আমাদের না বুঝলেও চলবে।
% ঠিক তাই তার কাজের সুবিধার জন্যই সে সব বাদ দেয়। কারণ, আমরা এক এক জন বিভিন্ন ভাবে প্রোগ্রাম লিখি। কেউ বেশি বেশি স্পেস দেই, কেউ বেশি ইন্টার/ ট্যাব দিয়ে সাজাই। কম্পিউটারের তো আর এত কিছু দেখে লাভ নেই, তার দরকার কি কাজ করতে হবে সেটা। তাই সব বাদ দিয়ে দেয়।
* ঠিকই তো করে, দরকার না হলে রেখে লাভ কি? আর আমাদেরও লিখে লাভ কি?
% একটু আগে ইমুকে কি প্রশ্ন করেছিল ?? সব এক লাইনে হলে বুঝব কিভাবে? আমরা যেন পড়ে বুঝতে পারি তাই আমরা এরকম স্পেস দিয়ে দিয়ে লিখি।
# আচ্ছা মামা, আমরা তো বুঝব কিন্তু কম্পিউটার বুঝবে কিভাবে? কোনটা কি? সবই যদি এক লাইনে হয়।
% গুড!! এ জন্য আমাদের কাজ করতে হবে সেটা হল, প্রতিটি কাজের শেষে সেমিকোলন “ ; ” দিতে হবে। যেখানে কম্পিউটার সেমিকোলন পাবে সে বুঝতে পারবে যে একটা লাইনের কাজর শেষ হয়েছে। এই কাজগুলো কে প্রোগ্রামিং এর ভাষায় Statement আর কোথায় কিভাবে আমরা লিখব তার একটা ব্যাকরণ আছে, তাকে বলে Syntax ।
# আবার ব্যাকরণ !!
% হ্যা ব্যাকরণ, তবে আমাদের বাংলা ব্যাকরণের মত এত কঠিন না, সব মিলিয়ে ২/৩ পৃষ্ঠা হবে।
* যদি আমরা ভুল করি ??
% কোন ব্যাপার না, Syntax ভুল করে শত চেষ্টা করেও প্রোগ্রাম চালানো যাবে না।
* কেন ?
% কারণ, আবার সেই কম্পাইলার। মনে আছে? কম্পাইলার হল দোভাষী, ভুল থাকলে সে বুঝবে না, আর না বুঝলে কম্পিউটারকেও সে বুঝাতে পারবে না।
* তাই তো। আর আমরা যদি ইচ্ছা করে ভুল করি?
% তাহলে প্রোগ্রাম চলবে কিন্তু উল্টাপাল্টা কাজ করবে। পরে এটা নিয়ে আরও একদিন গল্প করব। এখন বল, কি বুঝলি?
* আমাদের কম্পিউটারের ব্যাকরণ Syntax শিখতে হবে, আর আমরা যদি ভুল করি তাহলে কম্পাইলার আমাদের থামিয়ে দিবে।
% শুধু থামিয়ে দিবে না, কোথায় ভুল করেছি তাও বলে দিবে।
* ওয়াও তাই নাকি?
% জ্বী ম্যাডাম, তাই ভুল থাকলে মেসেজ দেয়। কি ভুল ,কোথায় ভুল সব বলে দেয় কিন্তু আমরা সেটা পড়ি না। গাধার মত ভুল খুঁজতে থাকি।
* ইস মামা, এটা আগে বলবা না! আমি তো ভুলের ভয়েই প্রোগ্রামিং করি না !
# আর মামা, আমি প্রোগ্রামিং করলে কোন ভুলই হবে না ।
% করলে তো ভুল হবে, যে করে তার একটু ভুল হতেই পারে। কিন্তু করতে করতেই ভুল হবে না। সকালবেলার আম-কাঠালের কথা মনে আছে ?
# এই তো মনে করিয়ে দিলে মাথার চারপাশে শুধু ঘুরবে এখন।
* এখন কি ঘুরছে ??
# আম, ৪/৫ রকমের আম।
% ইমু তোর আমগুলো আমাকে একটু দে!
# মানে ??? বুঝলাম না।
% এই যেগুলো ঘুরে আর কি !
# কি করবে ?
% ঝুড়িতে রেখে দেই। হি হি। কি কি আম আছে ?
# এই মনে কর, পাঁচটি। একটি হিমসাগর, একটি ল্যাংড়া, একটি ফজলী, একটি আম রুপালী, আর একটি মনে পড়ছে না ।
% ওকে, তাহলে ৪ টি আম ? কিন্তু আমরা পাঁচটি মাঝারী ঝুড়ি নিলাম, তাহলে আমাদের চারটি ঝুড়িতে চারটি আম আছে আর একটি ঝুড়ি ফাঁকা। ঠিক আছে ??
* জ্বী মামা, ধরে নিলাম আমাদের পাঁচটি ঝুড়ি আছে ।
# পাঁচটি ঝুড়ি কিন্তু চারটিতে আম আছে।
% ভেরি গুড। ঝুড়িতে আম রেখে দিলাম, দূর থেকে কি কোনটা খালি বুঝা যাবে ??
# না মামা, বুঝা যাবে না। কাছে গিয়ে দেখতে হবে ।
% এখন আমি একটু এলোমেলো করে রাখলাম, তারপর যদি বলি ল্যাংড়া আমটি কোথায়? বলতে পারবি ?
* মামা, সব ঝুড়িই তো এক, কাছে গিয়ে দেখতে হবে।
% না দেখা যাবে না ।
* তাহলে তো বলা মুশকিল।
# মামা, আমার মনে হয় বাম পাশেরটায়।
% কিভাবে বুঝলি?
# আমি মনে মনে ধরে নিয়েছি।
% হা হা…
* মামা, বাদ দাও তুমি ওকে বুঝাতে পারবে না।
% হা হা, তুই পারবি?
* আগে আমি বুঝে নেই তারপর আমিই পারব।
% ঠিক আছে, স্কেচবুকটা বের কর।
আমি, আপু আর মামা আমরা স্কেচবুকে যুক্ত হলাম।
% এই পাঁচটি ঝুড়িতে আম আছে,
মামা, এখন এঁকে এঁকে বুঝাচ্ছে।
% এখন ঝুড়ি দেখে বলতে হবে ভিতরে কোন আম, পারবি ??
* পারব, শর্ত কি কি ??
% শর্ত হল, আম রাখার পর ধরা যাবে না।
* রাখার আগে ধরা যাবে ?
# রাখার আগে দেখে লাভ কি ??
* লাভ আছে, তুই চুপ কর ।
% তা ধরা যাবে।
* ওকে, মামা। আম কোন ঝুড়িতে রাখবে সেটা কি আমাদের সামনে রাখবে ??
% হুম সামনেই রাখব।
* তাহলে খুব সহজ, আমি প্রথমে ঝুড়িগুলোকে আলাদা আলাদা রং করে দিব, এরপর কোন রঙের ঝুড়িতে কোন আম রাখবে সেটা মনে রাখব, খুব সহজ , হি হি।
% আর ইমু তুই কি করবি?
# মামা, আমি ইমু আপুকে সাহায্য করব।
% হা হা হা… ভালো করে সাহায্য করিস।
* মামা আমার উত্তর কি হয়েছে ??
% ১০০% হয়েছে। এখন প্রোগ্রামিং এ ফিরে আসি আবার –
# না মামা, এখন আর পড়াশুনা না।
* আবার দোভাষী?
% না, এখন আমাদের ঝুড়ি ।
* মানে কি ?? এখানে আবার প্রোগ্রামিং আসলো কোথা থেকে।
% মন দিয়ে শোন, আমারা অনেক কিছু পড়ে ফেলেছি ।
* তাই নাকি? কিছুই তো বুঝলাম না।
% আমি বলি তুই মিলিয়ে নে-
-আমাদের যেমন বিভিন্ন রকমের ফল আছে, তেমনি প্রোগ্রামিং এর সময় আমাদের বিভিন্ন রকমের তথ্য থাকবে। এর মধ্যে কিছু ছোট সংখ্যা(int), অক্ষর (charecter), দশমিকসহ সংখ্যা(Float), দশমিকসহ বড় সংখ্যা (Double) ইত্যাদি। এগুলোকে বলে Data Type।
– এই তথ্য/সংখ্যা রাখার জন্য আমরা যে ঝুড়ি ব্যবহার করেছি, তাকে বলে ভেরিয়েবল (Variable)।
– ঝুড়ি রং করাকে বলে হয় আইডেন্টিফায়ার(Identifier)। মানে ঝুড়ি চেনার জন্য, তবে প্রোগ্রামিং করার সময় আমরা রঙ না দিয়ে নাম দেই।
– তাহলে কোন ডাটা রাখতে হলে আমাদের সে অনুযায়ী ছোট/ বড় (ডাটা টাইপ) ঝুড়ি (ভেরিয়েবল) নিতে হবে, তারপর তার একটা নাম (আইডেন্টিফায়ার) দিতে হবে।
– ঝুড়িগুলো যেমন ঘরে রাখি, আর এই ভেরিয়েবলগুলো থাকে কম্পিউটারের মেমোরিতে।
– ঝুড়ি যেমন বড় ছোট আছে, তেমনি বিভিন্ন ডাটা টাইপের সাইজ ও বড় ছোট হয়। যেমন আমরা যদি ছোট সংখ্যা রাখতে চাই তাহলে int নিব, সাইজ মাত্র ৩২ বিট, বড় সংখ্যার জন্য double দিতে পারি (৬৪ বিট) আবার যদি অক্ষর রাখতে চাই তাহলে char, যার সাইজ মাত্র ৮ বিট।
মামা যখন বলছিল তখন আমি একবার মামার দিকে আরেকবার আপুর দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম, আর সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।
* মামা, আমি মনে হয় বুঝে গিয়েছি, ঘর হল আমাদের কম্পিউটারের মেমোরি, ঝুড়ি হল ভেরিয়েবল, ঝুড়ির সাইজ হল ডাটা টাইপ, আর ঝুড়ির একটা নাম দিতে হবে যেন পরে খুঁজে বের করতে পারি তা হল আইডেন্টিফায়ার। একটা উদাহরণ দিতে পারবে ?
% চমৎকার, এইতো বুঝে গেছিস। আর এটা দেখ-
এরপর মামা স্কেচবুকে লিখতে শুরু করল।
int a=5;
% এখানে int হল, ডাটা টাইপ, আমরা যেহেতু ছোট নাম্বার নিব তাই int নিয়েছি।
# আর ৫ হল আম, তাই না মামা?
% ঠিক তাই, তুই তো বুঝে গেছিস।
* কিন্তু মামা, ভেরিয়েবল আর আইডেন্টিফায়ার কোনটা? বাকি তো শুধু a।
% এখানে a দিয়ে আমরা ভেরিয়েবল বুঝলেও a আসলে ভেরিয়েবলের আইডেন্টিফায়ার। এখানে ভেরিয়েবল a হল মেমোরির ভিতরে ৩২ বিটের একটা জায়গা। আর এই জায়গা যেন আমরা খুঁজে বের করতে পারি তাই তার একটা নাম দেয়া হয়েছে, আর এই নাম দিয়েই আমরা এই ভেরিয়েবল ব্যবহার করব।
# মামা, কেমন কেমন লাগছে ! একটু বুঝিয়ে বল।
* তাহলে কি ভেরিয়েবল আর আইডেন্টিফায়ার একই?
% এক না, আইডেন্টিফায়ার হল যেকোন কিছুর নাম দেয়া। সেটা ভেরিয়েবল ও হতে পারে অন্য কিছুও হতে পারে। এখন কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, আপনি কে? আর তার উত্তরে আমি যদি বলি, আমি মানুষ। এখানে আমি কি কোন ভুল করছি ?
* ভুল কেন হবে? আমরা সবাই মানুষ, কিন্তু নাম দিয়ে সবাইকে আলাদা করে চিনি।
% এক্ষেত্রও তাই, a ভেরিয়েবল হলেও তাকে আমরা নাম দিয়ে চিনি।
* আচ্ছা আচ্ছা, এভাবে তো ভাবিনি। এখন বুঝতে পারলাম, আসল ভেরিয়েবল কোনটা। হা হা হা…
# কিন্তু মামা, একে ভেরিয়েবল বলে কেন ?
% কারণ, মেমোরির ভেতরে যে ৩২ বিটের জায়গা এখানে আমরা যেকোন সংখ্যা রাখতে পারি, আবার আমাদের প্রয়োজন হলে আগের সংখ্যা বাদ দিয়ে নতুন সংখ্যা রাখতে পারি। সবসময়ই এর মান পরিবর্তনশীল তাই একে ভেরিয়েবল বলে।
# তার মানে, ঝুড়ি থাকবে কিন্তু আম খেয়ে আবার নতুন আম রাখতে পারব?
% হা হা, অনেকটা এরকম।
* মামা, ইমুকে দিয়ে প্রোগ্রামিং হবে না, সে সব খেয়ে ফেলবে, হি হি…
% এখানে আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সেটা হল ভেরিয়েবলের নাম।
# নাম দেয়া কোন ব্যাপার?
% কি নাম দিবি?
# এই মনে কর, কিছু একটা দিব, মাথায় আসছে না।
* মামা, ও নাম দিবে শনিবার। হি হি…
% তারপর কি হবে? ইমুর কোন প্রোগ্রামিংই তো আর কাজ করবে না ।
# না মামা, শনিবার দেওয়া যাবে না। খাল কেটে কুমির আনতে চাই না ।
% ঠিক তাই, শনিবার দেওয়া যাবে না। আরো অনেক কিছু দেওয়া ঠিক হবে না।
# বাঁচালে মামা।
% হুম, কিন্তু কেন দেওয়া যাবে না ??
* আর কি কি দেওয়া যাবে না ?
% আমরা যদি শনিবার, শুক্রবার বা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি নাম দেই তাহলে কি ঠিক হবে ??
* না মামা, ঠিক হবে না, নাম দেওয়ার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন মানা উচিত। ইমুকে যদি এখন শনিবার ডাকি সেটা কি ঠিক হবে ??
# মামা, আপুকে থামাও, আমি কিন্তু চলে যাব।
% আরে যেতে হবে না, তোর নাম নিয়ে তো আমরা কথা বলছি না। ভেরিয়েবলের নাম কি দেয়া যায় সেটা নিয়ে ভাবছি।
* দিনের নাম, মাসের নাম এগুলোকি মানুষের নাম হয় নাকি ?? আর অন্যকাজেও তো এগুলো ব্যবহয়ার করতে দেখি নাই।
% ঠিক তাই। এর কারণ হল, এ নামগুলো বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয় এবং সেটা আমরা জানি। প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রেও এরকম বিশেষ কিছু শব্দ আছে, যেগুলো আমরা আইডেন্টিফায়ার হিসাবে, মানে নাম দেয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারব না। আর এই শব্দগুলোকে বলে কিওয়ার্ড।
* মামা, আমি তো কিছু কিওয়ার্ড জানি , যেমন if, for, while, main…
% চমৎকার! এমন ৩২ টির মত কিওয়ার্ড আছে। শুধু তাই নয়, নাম দেওয়ার আরও কিছু নিয়ম আছে, যেমন-
– নাম এক শব্দের হতে হবে।
– নাম কোন সংখ্যা দিয়ে শুরু হতে পারবে না, তবে নামের শেষে সংখ্যা থাকতে পারে।
এমন আরো কিছু আছে –
* আচ্ছা সবই বুঝলাম, কিন্তু মাঝে মাঝে ভেরিয়েবল উল্টাপাল্টা কাজ করে কেন??
% কেমন ?
* যেমন, প্রিন্ট করলে ৫ দেখানোর কথা, কিন্তু আসে ৩৭৫১!
% হা হা এই কথা ??? এটা তো ইমু ভালো বলতে পারবে।
# কি যে বল মামা, তুমি থাকতে আবার আমি কেন ???
% আরে পারবি, কিছুদিন আগে আমরা যে সমস্যার সমাধান করলাম, তার সাথে এর মিল আছে।
# মামা, কোনটা, এসাইনমেন্ট ডিলিটের ঐটা?
% ঠিক তাই, এখন ইমি কে বুঝা…
# মামা আমি পারব বুঝাতে, কিন্তু তোমার সামনে পারব না, ওস্তাদের সামনে বেয়াদবি হয়ে যাবে, তুমিই বুঝাও।
% হা হা হা, কি ভাব?? পারবি না সেটা বল। মেমোরির কোন জায়গা খালি থাকে না মনে আছে ?
# থাকবে কেন?? সব জায়গায় ০, ১ আছে । কিন্তু সব আমাদের কাজে লাগে না। যেগুলো কাজের সেটা আমরা একটা টেবিলের থেকে খুঁজে বের করি।
% এই বিষয়টা এখন আমাদের কাজে লাগবে।
* মামা, এখন তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
% হুম, তাই হবার কথা, ব্যায়াম করে আর একটু লম্বা হলে আর উপর দিয়ে যেত না। যাইহোক এখন মন দিয়ে শোন, ২ মিনিটের ব্যাপার।
এরপর মামা, আপুকে কম্পিউটারের মেমোরি কিভাবে কাজ করে তা বুঝিয়ে দিল।
* আচ্ছা এই কথা। ঠিক তো ০,১ ছাড়া তো কিছু থাকবে না ।
% এখন বল, ভেরিয়েবলের জন্য আমরা যে ৩২ বিটের জায়গা নিলাম সেখানে কি আছে ?
* ০,১ আছে অনেকগুলো।
% অনেকগুলো না আসলে ৩২ টি। কিন্তু এগুলো আমরা রাখি নাই। আগেই ছিল। কি ছিল তাও আমরা জানি না।
* ঠিক কি ছিল তাও আমরা জানি না।
% এখন যদি কিছু না রেখে প্রিন্ট দেই কি পাব?
# হা হা মামা, এটা তো সহজ। ভেরিয়েবলে আগে থেকে যা আছে তাই পাব।
* কিন্তু আমরা তো কিছু রাখি নি।
% কিছু রাখি নি, আগে থেকে উল্টাপাল্টা কিছু ছিল, আর সেটাই প্রিন্ট হবে। আর এই উল্টাপাল্টা যা পাবে একে বলে “গার্বেজ ভেলু (Garbage value)” ।
* মামা এখন আমি বুঝে গিয়েছি, আমি কোনকিছু না রেখেই মনে হয় প্রিন্ট দিয়ে দিয়েছি। যদি শূন্য রেখে প্রিন্ট দিতাম তাহলে শূন্য পেতাম, ১০০ রাখলে ১০০, আর কিছু না রেখে প্রিন্ট দিলে হাজার হাজার, হি হি …।
# মামা একটা কথা বলি?
% বল কি বলবি।
# মামা, গোপন কথা, আপুর সামনে বলা যাবে না।
% হুম, কি আর করা? ইমি, ইমুর একটু প্রাইভেসি দরকার। ১০ টার দিকে আমরা আরও একবার গল্প করতে বসব। আর কাল কিন্তু আমরা বের হচ্ছি, মনে আছে তো ?
* জ্বী মামা, মনে আছে। তোমরা তাহলে ষড়যন্ত্র কর আমি যাই।
% কিসের ষড়যন্ত্র?
# মামা, আপু সহ্য করতে পারছে না, আমি যে তোমার সাথে কথা বলব সেটা। তাই আরকি হি হি…
* হুম অনেক পেকে গেছিস। থাক তুই, আমার অনেক কাজ আছে।
এরপর আপু মামার ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
% বল এখন কি বলবি?
# মামা, কিভাবে যে কি বলি?
% কেন? সিরিয়াস কিছু??
# আরে না, তেমন কিছু না। মাথার মধ্যে সবসময় উল্টাপাল্টা কি সব ঘুরতে থাকে, সে সব নিয়ে পরে কথা হবে। কিন্তু এই ০,১ দিয়ে কম্পিউটার এত কাজ কিভাবে করে ? সেটা তো আমার মাথায় কোনোভাবে ঢুকছে না। খালি সুইচ অন অফ করে, আর সব কাজ হয়ে যায়?? তুমি আসার পর থেকে বলব বলব করে বলা হচ্ছে না। তুমি কি না কি মন কর? আর আপু যদি আমার এমন প্রশ্ন শুনে তাহলে তো আগামী ১ মাস পঁচাবে।
% এই কথা ??? এটা তো আমাকে আগেই বলতে পারতি, থাক বলে ভালো করেছিস। মাথার মধ্যে প্রশ্ন না রেখে বলে ফেলা ভালো। আর তা না হলে আমের মত প্রশ্নও ঘুরতে থাকবে। হা হা হা।
# মামা, এখন দেখি তুমিও আমাকে পঁচাও।
% আরে না না। এমনি মজা করলাম আরকি। তাহলে আমরা রাতে এই বিষয়ে কথা বলব।
# আপুর সামনে ?
% হুম, কারণ আমার মনে হয় সেও এটা জানে না। কিন্তু তুই যে এটা জানতে চেয়েছিস সেটা বলব না, ওকে।
# বাঁচালে, অনেক চিন্তা ভাবনা করে আজ তোমাকে বলেছি। কোনোকিছু বুঝতে না পারলে আমার মাথার চারপাশে ঘুরতে থাকে। অন্যকিছু করতে পারি না ।
% হয়েছে, এখন আর বক্তৃতা দিতে হবে না। আমার কিছু কাজ আছে, পড়তে বস গিয়ে। রাতে দেখা হবে।
মামার ঘর থেকে বের হয়ে আমার ঘরে চলে আসলাম, মনে অনেক শান্তি লাগছে। ০,১ দিয়ে এত কাজ কিভাবে হয় ?? এই ভূত আমার মাথা থেকে আজ বের হবে।
রাতে খাবার টেবিলে মামা আর আম্মু কথা বলছিল, মনে হয় আব্বুর ব্যাপারে। আমাদের দেখে, মামা আগের কথাবার্তা বাদ দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলা শুরু করল।
~ কিরে ইমি, তোর প্রোগ্রামিং শেখা কেমন হচ্ছে?
* আরে আম্মু, প্রোগ্রামিং তো আর এখন ভয় লাগে না। আজ মামা, অনেক কিছু বুঝিয়েছে, আগে এসব কিছুই বুঝতাম না, বইয়ে কঠিন করে লেখা। কিন্তু মামার সাথে আজ গল্প করার পর এখন বই পড়ে সব বুঝতে পারছি।
~ কিরে রাহুল, তোকে কি গল্প করতে বাসায় আসতে বলেছি?
% আপা, শুধু রাগ করছো। এই ইমি, আজ কি কি শিখলি ?
* মামা, অনেক কিছু
– ঘর হল মেমোরি
– ঝুড়ি হল ভেরিয়েবল
– ঝুড়ির সাইজ হল ডাটা টাইপ, আমাদের নানা রকমের ডাটা টাইপ লাগবে,
– ঝুড়ির নাম হল আইডেন্টিফায়ার।
– নামে দেয়ার কিছু নিয়ম আছে যেমন, কীওয়ার্ড গুলো দেয়া যাবে না
– কিছু না রেখে প্রিন্ট দিলে গার্বেজ ভ্যালু দেখাবে।
# মামা, আপু কিছু বাদ দিয়েছে !
% কি বাদ দিল?
# এর আগে কি শিখেছি সেগুলো, যেমন-
– কোন কাজ কে স্টেটমেন্ট (Statement) বলে।
– চাইলে আমরা সব কোড এক লাইনে লিখতে পারি, না লিখলেও দোভাষী সব এক লাইনে করে দেয়।
– ভুল করলে, দোভাষী আমাদের থামিয়ে মেসেজ দেয়।
– কম্পিউটার বা দোভাষী বাংলা বুঝে না, তাই আমাদেরকে প্রোগ্রামিং শিখতে হবে।
– আর মেমোরির ভিতরে ০,১ ছাড়া কিছু নেই।
– আর…
আম্মু আমাদের কথা হা করে শুনছিল।
~ ওরে বাপরে! এক দিনেই এত কিছু ??? নিজেরা একটু মন দিয়ে পড়লে তো আর মামাকে এসে কষ্ট করতে হয় না।
* না আম্মু, এই গুলো বইয়ে অনেক কঠিন করে লেখা। আগে তো কিছুই বুঝতাম না এখন মামার সাথে গল্প করার পর দেখি সবই বুঝি। মামার কাছে জাদু আছে ।
% হা হা হা।। জাদু করলাম আবার কখন ??
* আরে এই জাদু সেই জাদু না, আমি এক মাসে যা বুঝি নি তুমি একদিনে সব বুঝিয়ে দিলে।
% হইছে, এখন চুপচাপ খা, আর ১০ টায় আমার রুমে চলে আসবি।
[1] হেটফ্রুট (কাল্পনিক) ফল কাটা কাটি করার খেলা