আমার সব শেষ – ৩

বাসায় গিয়ে ২টা কাজ করতে হবে। এক, আপুকে জ্ঞান দিতে হবে আর দুই মামার নতুন কবিতা পড়তে হবে। মামা অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে। এর আগে একদিন আমাদের বাসায় এসে দেখে ইন্টারনেট নেই। সেই দুঃখে বসে বসে কবিতা লিখে ফেলল।

ফিরে এসো তুমি বুঝলে না আমায়!   আমি বেঁচে থাকি তোমার ছায়ায়।   দিন কিংবা রাত- হাতে রেখে হাত; তুমি আছো তাই- আমি- অজানাতে হারিয়ে যাই।   তুমি সব জানো! আমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি। আমার শেষ ভরসা তুমি। যেখানে আমি থেমে যাই- সেখানেই তোমায় পাই। তুমি থাকলে আমার পাশে, জটিল কঠিন সবই করব হেসে হেসে।   যেদিন থেকে পরিচয় মনের মধ্যে ভীষন ভয়! অল্পতেই অভিমান- মান ভাঙাতে আমার যায় জান! দেখা হলেই এটা সেটা- পকেটের বাজে বারোটা! সে যাই হোক- প্রতিদিন দেখতে চাই তোমার মুখ।   সবাই তোমায় চায়- কেউ পায়, কেউ বা হারায়। তুমি সবার হতে চাও! আবার তুমি কারো নও!   তুমি এমন কেন ? আমি কি এতই খারাপ? কি ভুল করলাম আমি? দূরে চলে গেলে তুমি।   আমি আর পারছি না, তোমায় ছাড়া সময় আমার কাটে না। ফিরে এসো- ইন্টারনেট ! আমি আর পারছি না।  

আজও নিশ্চয়ই এমনই মজার কোন কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। মামার কথা ভাবতে ভাবতেই বাসায় পৌঁছে গেলাম। হাতমুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার শেষ করেই ই-মেইল চেক করলাম। ইয়েস, মামার কবিতা চলে এসেছে। অনেক বড় কবিতা-


আদম ব্যবসা

আমার ব্যবসা –
আদম ব্যবসা ।
 
এই দেশ, সেই দেশ
পার করলেই কাজ শেষ।
 
কাগজ পত্রের দরকার নাই,
আমি আছি ভয় নাই ।
 
চল আমার কাছে,
অনেক কিছু আছে !
 
ভয় পেয়ো না তুমি,
পার করব আমি ।
 
সামনের রবিবার!!
বল বার বার !!
 
টাকা লাগবে কড়ি কড়ি,
হবে তোমার বাড়ি গাড়ি ।
 
— আমার-তো টাকা নাই?
তাহলে আমি বাড়ি যাই!!
 
তুমি আমার ভাই !
অল্প-ই চাই।
 
অল্প অল্প দিও।
সব বুঝে নিও!
 
— ভাই, কোন দেশ?
আজব দেশ, বেজায় বেশ!
 
সব আছে !
নতুন সাঁঝে !!
 
তুমি আসবে,
আর সব পাবে !!!
 
তুমি আমার আপনজন ।
আনো আরও দশজন!
 
তোমাকেও কিছু দিব!
(সবই আমি নিব !!)
 
— অল্প করে টাকা দেই !
— আর আজব দেশের খোঁজ নেই !
 
— আমার কোন কাজ নাই।
— নতুন আদম খুঁজি তাই ।
 
— ভাই আমার সাথে চল;
— তোমার কি চাই বল ?!
 
— চল নতুন দেশে চল;
— তোমার কি চাই বল ?!
 
— সব হবে তোমার !
— ভাব এক বার ।
 
— আমি কিন্তু যাব,
— সবই আমি পাব !!
 
— তুমি আর একজন,
— বাকি রইল নয়জন ।
 
— আমার আপনজন, এক জন ,
— আজব দেশের মহাজন ।
 
— যাই আজব দেশে যাই-
কিরে তোর খোঁজ খবর নাই !
 
জ্বী মহাজন,
–আসবে কয়েকজন !
 
— বোঝাতে হয় অনেক,
— সবার আছে বিবেক!
 
— স্বপ্ন দেখাই আমি !
— কথা আমার দামী ।
 
সাবাস বেটা সাবাস !!!
করব আমরা সুখে বসবাস।
 
সাবধানে থাকবি,
অনেক টাকা কড়ি আনবি।
 
তোর দূরে কিংবা কাছে,
অনেক পণ্ডিত আছে!
 
দেশকে ভালবাসে !!!
তাতে আমাদের কি আসে?!!!
 
— মহাজন!!
— আপনি আমার আপনজন ।
 
— কবে যাব আমি?
— জানতে চায় (আমার) উনি!
 
আরে যাবি –
অনেক বড় হবি !!

কবিতা পড়তে পড়তে দেশের এক শ্রেণীর মানুষের কথা মনে পড়ে গেল। তারা     কিভাবে গরিব মানুষদের ঠকিয়ে ধনী হচ্ছে আর গরিব মানুষ তার সহায় সম্বল হারাচ্ছে। মামা কবি হলে ভাল হতো। মামার কথা মনে হতেই মনে পড়ল ইমি আপুকে জ্ঞান দিতে হবে। মোবাইল নিয়ে চলে গেলাম আপুর রুমে। আপু পড়ছে। দরজায় শব্দ করলাম

# আসতে পারি?

* হুম আয়, কিছু বলবি?

# হুম, তোমাকে নিয়ে তো আমরা সবাই অনেক চিন্তিত!

* আমি আবার কি করলাম? আর সবাই চিন্তিত মানে? কে কি বলেছে ?

# আরে চিন্তা না করে উপায় আছে ? আর একটু হলেই তো ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছিলে। আজ মামার সাথে কথা হল, মামা এখন এন্টার্কটিকাতে। বুধবার আসবে, আমাদের সাথে ফাইনাল খেলা দেখবে।

* তাহলে তো খুব মজা হবে। মামা আসবে সেটা তো বুঝলাম কিন্তু আমাকে নিয়ে চিন্তার কি আছে? আমি আর ঐসব লটারির মধ্যে নাই।

# শুধু কি লটারি, এমন আরো অনেক ফাঁদ আছে। সাইবার সিকিউরিটির উপর অনেক পড়াশুনা করে একটা ভিডিও বানিয়েছি। তোমার রুমেই তো শুটিং করলাম। মামা বলেছে সেই ভিডিওটা তোমাকে দেখাতে। আগেই যদি দেখতে তাহলে নাকি এমন ঘটনা আর ঘটতো না।

কথা বলতে বলতে আমি মোবাইল বের করে ভিডিও খুঁজছি-

* তুই কি আমাকে এখন ভিডিও দেখাতে এসেছিস?

# মামার আদেশ, মামা বলেছে তোমাকে জ্ঞান দিতে।

* হয়েছে আমি তোর লেকচার দেখি, আর সারাজীবন তোর পঁচানি খাই।

অনেক খুঁজেও ভিডিও পাচ্ছি না, কি যে হল …!

আরো গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published.