# আপু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে, ভিডিও পাচ্ছি না। আমার ড্রাইভে বা ভিডিওবক্স কোথাও নেই।
* খুব ভালো হইছে। আসছে, আমাকে জ্ঞান দিতে। নিজের জিনিসই ঠিক রাখতে পারে না । যা ভাগ এখান থেকে।
আমার তো মাথা একদম কাজ করছে না। এখনও অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেই নি। মামাও দেশে নাই। কিভাবে আবার বানাবো? আমি শেষ! মোবাইলেই তো ছিল, তুহিন কে ও দেখালাম। তুহিনকে ফোন করে দেখি-
# হ্যালো তুহিন, কেমন আছিস?
তুঃ ভাল। তোর কি খবর?
# বাসায়, আমি তো বিপদে পড়ে গেছি। মোবাইলে ভিডিওটা খুঁজে পাচ্ছি না।
তুঃ কোন ভিডিও? তোর অ্যাসাইনমেন্ট? আজ দুপুরেও তো তোর মোবাইলে দেখলাম।
# হুম, এখন আর পাচ্ছি না। কি হবে আমার? তোর কি কিছু মনে পড়ে?
তুঃ তোর মামা না ফোন করল, এরপর আর ভিডিও দেখি নাই। তুই বাসায় চলে গেলি। তবে তোকে মোবাইল দেয়ার সময় কি একটা মেসেজ এসেছিল, আমি ইয়েস করে দিয়েছি।
# সর্বনাশ! না পড়েই ইয়েস করে দিয়েছিস? মনে হয় ডিলিট হয়ে গেছে। এখন কি হবে?
তঃ সরি দোস্ত, বুঝতে পারি নাই। আমি ভাবলাম অন্য কোনো মেসেজ হবে।
# আরে বোকা মেসেজ না পড়ে কেউ ইয়েস করে নাকি?? আমরা যদি শুধু মেসেজ পড়ে ক্লিক করতাম তাহলে অর্ধেক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যেতাম। তোর সাথে কথা বলে আর লাভ নাই। তুই তোর অ্যাসাইনমেন্ট কর। দেখি আমি কি করা যায়।
মাথায় কিছু আসছে না, রিসাইকেল বিনেও নাই। এই মুহূর্তে কেউ যদি কিছু করতে পারে সে হল মামা। মামার ফোন নাম্বার তো জানি না। তাই আবার ই-মেইল করলাম।
————————-
মামা, বিপদ!
তুমিই পারো আমাকে বাঁচাতে। আমার অ্যাসাইনমেন্ট ডিলিট হয়ে গেছে।
ইমু
————————-
মামাকে ই-মেইল দিয়ে ওয়ানসার্চে অনেক খুঁজেও কোন ভাল সমাধান পেলাম না। একটু পরেই মামার উত্তর পেলাম।
==============
এখন একটু ব্যস্ত।
তোদের সময় রাত ৮ টায় কথা হবে। আর কম্পিউটারে কিছু করিস না। বিশেষ করে যে ড্রাইভে ভিডিওটা ছিল সেখানে।
চিন্তা করিস না, আমি তো আছি! সব ঠিক হয়ে যাবে।
ইতি
তোর মামা।
==============
মামার উত্তর পেয়ে এখন একটু ভালো লাগছে। আমি মামাকে “ওকে” লিখে পাঠিয়ে দিলাম। ভাবছি মামা কত কিছু জানে! একদিন তো আমিও মামা হব, তখন আমাকেও এতকিছু জানতে হবে।
বিকালে আমি আর আপু রমনা পার্কে ঘুরে আসলাম। অনেকদিন হল আপু হাঁটতে বের হয় না। আমার উপর একটু রাগ করেছিল তাই আপুর সাথে বের হতে রাজি হয়ে গেলাম। ঘুরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসলাম।
সন্ধ্যার পরই পড়তে বসে গেলাম। মাথায় শুধু ঘুরছে আমার অ্যাসাইনমেন্টের কি হবে। কখন ৮ টা বাজবে। পড়ছিলাম, হঠাৎ ফোন বেঁজে উঠল। ঘড়িতে ৭ টা ৪০ মিনিট।
# হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
% ওয়া আলাইকুম আসসালাম। কিরে তোর অ্যাসাইনমেন্টের কি অবস্থা ?
# ও মামা, তুমি! এখনো তো ৮ টা বাজে নি।
% তাই নাকি? তাহলে পরে ফোন দেই?
# আরে না মামা, আমি কি তা বলেছি নাকি? চিন্তায় আমি শেষ আর তুমি মজা নিচ্ছো।
% মজা করলাম কই? তুই ব্যস্ত থাকতে পারিস তাই জিজ্ঞেস করলাম। এখন বল ঘটনা কি?
# ঘটনা হল, তুমি তো তুহিনকে চিন। আমার বন্ধু, তাকে আজ ভিডিওটা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।
% তো সে কি বলল?
# কি আর বলবে? ভালো বলেছে, কিন্তু উলটা-পাল্টা চেপে ডিলিট করে ফেলেছে।
% কি বলিস? তোর এত ভালো বন্ধু! আর সে না রোবট-টোবট বানায়? সে আবার এমন কাজ করল কিভাবে ?
# আরে রোবট বানালে কি হবে? গাঁধা একটা। ভুলে ডিলিট বাটন চাপ পড়তেই পারে তাই বলে না পড়েই সে ইয়েস করে দিবে ?
% আরে মাথা ঠান্ডা কর। যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন তোর স্ক্রিন-শেয়ার[1] টা চালু কর।
আমি আমার কম্পিউটারের স্ক্রিন-শেয়ার সফটওয়্যার টা চালু করে এই সেশনের জন্য যে পাসওয়ার্ড (ও টি পি) আছে তা মামাকে জানালাম।
# মামা, আমার ইউজার আইডি তো জানো? imubd365
% জানি আমি, এটা কি প্রথম কথা বলছি তোর সাথে ??
# হা হা তাও বললাম। আরো কত মানুষের সাথে কথা বল, সেগুলো কি আমি জানি নাকি?
% তোর এতোকিছু জানা লাগবে না, ও টি পি নাম্বার দে।
# 528396
মামাকে ও টি পি দেয়ার পর এখন মামা আমার কম্পিউটারের সবকিছু দেখতে পারছে। অর্থাৎ উনি এন্টার্কটিকায় বসে আমার কম্পিউটার চালাচ্ছে। এখন আমরা স্ক্রিন-শেয়ারের মাধ্যমেই কথা বলছি।
% কি বলেছিলাম মনে আছে ???
# জ্বী মামা। আমি ঐ ড্রাইভে কিছুই করি নি যেভাবে তুমি বলেছিলে।
% এখন কি মনে হয়??? তোর অ্যাসাইনমেন্ট আছে নাকি নাই ???
# দেখা যাচ্ছে তো নেই, ডিলিট হয়ে গেছে। কিন্তু আবার আমার মন বলছে আছে। কিন্তু সেটা তো অসম্ভব। তুহিন তো স্বীকারই করেছে যে সে ডিলিট করে ফেলেছে।
আমার সাথে কথা বলতে বলতে মামা কাজ করছে আর কিভাবে কি করছে সেটা আমি দেখতে পারছি। উনি প্রথমে ওয়ানসার্চে খুঁজে “আনডু [2]” সফটওয়্যারটি ইন্সটল করল।
% শোন, কম্পিউটারের মেমোরিতে কি খালি জায়গা আছে ??
# মামা, কি বল? খালি জায়গা থাকবে কিভাবে? জিরো-ওয়ান ছাড়া কিছু নেই।
% মনে কর, তোর ১০০ জিবির পেনড্রাইভ আছে। এরমধ্যে তুই ১০ জিবির একটা মুভি রাখলি। এখন বাকি ৯০ জিবিতে কি আছে ?
# মামা, কি আছে মানে ? কি থাকবে ? কিছুই নেই!
% হা হা, একটু আগে কি বললি? খালি থাকা সম্ভব না আর এখন বলছিস ৯০ জিবি খালি! তোর কি মাথা ঠিক আছে ?
# মামা, আগে ঠিক ছিল কিন্তু এখন কেমন কেমন লাগছে।
% সব ঠিক হয়ে যাবে, মন দিয়ে শোন। যা বলছি তা আগে বোঝার চেষ্টা কর। আর না বুঝলে বলবি, ঠিক আছে ?
# হুম, ঠিক আছে। ৯০ জিবি তে কি আছে, সেটা ঠিক নেই।
% জিরো-ওয়ান ই আছে কিন্তু সেগুলো কোন কাজের না। কেউ চাইলে সবগুলো ১ বা ০ করে রাখতে পারে। কিন্তু এটা করে কোন লাভ নাই। খেয়াল করে দেখ, আমরা কিছু রাখার পর বাকি জায়গা কিন্তু খালিই দেখায়।
# তাই তো আমি জানি, ৯০ জিবি খালি দেখাবে কিন্তু তুমি বললে ঐ জায়গা খালি না। খালি কিন্তু খালি না। ভালো একটা ধাঁধা হয়ে গেল। কালই স্কুলে গিয়ে সবাইকে এটা জিজ্ঞাসা করব।
% আরে থাম থাম, “খালি, কিন্তু খালি না” এটা কিভাবে কি অন্যরা বুঝতে চাইলে কি বলবি?
# বলব,
খালি কিন্তু খালি না,
আমি কিছু জানি না।
% হা হা। কবি ইমু সাহেবকে এরপর হাসপাতালে পাওয়া যাবে। ধাঁধা জিজ্ঞাসা করে যদি উত্তর দিতে না পারিস তাহলে তোর কি অবস্থা হবে একবার চিন্তা করে দেখ।
# কোনো দরকার নেই, এসব চিন্তা করে কি হবে? শুধু মাথায় কিছু নিউরন ঝড় বয়ে যাবে। এরপর স্বপ্নে দেখব সবাই আমাকে মারছে । তাই কখনও উল্টা-পাল্টা চিন্তা করা ঠিক না ।
% ওরে বাপ-রে অনেক সচেতন কবি। থাক, তোর আর চিন্তা করতে হবে না। এখন মন দিয়ে শোন, তোকে একটা উদাহরণ দেই-
[1] স্ক্রিন-শেয়ার- (কাল্পনিক) দূর থেকে একজন অন্য আর একজনের কম্পিউটার চালাতে পারে।
[2] আনডু –(কাল্পনিক) ডিলিট হওয়া ফাইল খুজে বের করার সফটওয়্যার