আমার সব শেষ – ৫

আমাদের হাতে ক, খ, গ, ঘ, ঙ এই ৫ টি ফাইল আছে আর মেমোরিতে জায়গা আছে ১০ এমবি। এই ফাইলগুলো সেভ করে রাখতে হবে। ফাইলগুলো হল-

ক   ২ এমবি,
খ   ৪ এমবি,
গ   ২ এমবি,
ঘ   ১ এমবি,
ঙ   ১ এমবি,

মোট ১০ এমবির পাঁচটি ফাইল আমরা রাখলাম। যদি সব মিলিয়ে ১০ এমবির বেশি হতো তাহলে আমরা সবগুলো কিন্তু রাখতে পারতাম না।

মামা কথা বলছে আর আমার ভিডিও খুঁজে বের করছে। আনডু তে আমার সব ফাইল দেখাচ্ছে। এখানে মামা কিছু কমান্ড দিয়ে সব ডিলিট হওয়া ফাইল খুঁজে বের করছে।

কাজ চলছে আর আমরা কথা বলছি। মামা আমাকে ভালো করে বুঝানোর জন্য স্কেচবুক [1] সফটওয়্যারটি চালু করল। সেখানে মামা যা বলছে তা একে একে আমাকে বুঝাচ্ছে।

এখন আমাদের হাতে নতুন এক ফাইল দেওয়া হল এবং সেটা খুব জরুরী।

          চ        ৫ এমবি

কিন্তু আমাদের মেমোরিতে তো ৫ এমবি জায়গা খালি নেই। আর ৫ এমবি এর কোন ফাইল

 ৪১ 

এখন আমাদেরকে “চ” রাখার জন্য দুই বা তিনটি ফাইল ডিলিট করতে হবে। আমরা খ (৪) আর ঘ (১) ডিলিট করে চ রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম।

 –– 

এখন আমাদের ৫ এমবি খালি জায়গা আছে কিন্তু আমরা কি এখন “চ” রাখতে পারব ?

# মামা, কি এক ঝামেলা! বাইরে থেকে তো ৫ এমবি খালিই মনে হবে কিন্তু ভিতরে তো ঝামেলা। ৫ এমবির ফাইল তো রাখা যাবে না । একটানা খালি না থাকলে একটা ফাইল কিভাবে রাখব?

% এটাই তো মজা। চ রাখা যাবে এবং আমাদের একটানা খালি জায়গার প্রয়োজন নেই।

# তাই নাকি ??? ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখলে তো কাজ করবে না।

% কাজ করবে।  শোন-  

মেমোরির প্রতিটা অংশের ঠিকানা আছে, সেটা ব্যবহার করেই কম্পিউটার আমাদের প্রয়োজনীয় ফাইল খুঁজে বের করে। মনে করি, “খ” শুরু হয়েছে ৪৯৭ থেকে আর “ঘ” শুরু হয়েছে ৮১৫ থেকে। এখন আমাদেরকে এই দুই জায়গায় “চ” রাখতে হবে। আর চ সহ অন্য ফাইলগুলো কোথায় আছে সেটা মনে রাখার জন্য কম্পিউটার একটা ছক ব্যবহার করে ।

ফাইলের নামঠিকানাসাইজপরের অংশ
২৪৬২০৩৫ 
৪৯৭৪৪১০ 
৭১৪২০১০ 
৮১৫৯৮০ 
৯১০১০৩০ 

এখন আমরা যদি খ ও ঘ ডিলিট করে সেখানে চ রাখি তাহলে ঠিক এভাবে দুই ভাগে  মেমোরিতে চ থাকবে।

ফাইলের নামঠিকানাসাইজপরের অংশ
২৪৬২০৩৫ 
৪৯৭৪৪১০৮১৫
৭১৪২০১০ 
৮১৫১০৮০ 
৯১০১০৩০ 

এখন কেউ যদি চ ফাইল চায় তাহলে কম্পিউটার ৪৯৭ থেকে তথ্য দেয়া শুরু করবে এরপর বাকি অংশ ৮১৫ থেকে দিবে এবং এটা খুব তাড়াতাড়ি হয় যে, কেউ সেটা টেরই পায় না ।

কি বুঝলি?

# মামা, এমন না হলে তো আমাদের বিপদ হত। জায়গা খালি থাকতো কিন্তু আমরা ব্যবহার করতে পারতাম না। কিন্তু মামা, যখন বড় একটা ফাইল অনেকগুলো জায়গায় থাকবে তখন তো এটা খোঁজার জন্য কম্পিউটারকে একটু হলেও কাজ করতে হবে আর এতে সময়ও লাগবে।

% সময় লাগবে, কথা সত্য। এর সমাধানও আছে। তোর স্কুলের লাইব্রেরীতে যদি বই এলোমেলো থাকতো তাহলে কিভাবে বই খুঁজে পেতি ?

# মামা, কেন পাব না ! পাব, তবে ৪/৫ দিন সময়ও লাগতে পারে। 

% হা হা, আর যদি গুছিয়ে রাখে তাহলে ? মানে, যদি সব ইতিহাসের বই একসাথে অক্ষর অনুযায়ী সাজানো থাকে। 

# তাহলে ৪/৫ মিনিট।

% ঠিক তাই। কম্পিউটারও ঠিক এই কাজই করে। একে বলে ডিফ্রাগমেন্টেশন। ডিফ্রাগমেন্টেশন করলে একই ধরনের ফাইল একসাথে নিয়ে আসে। এর ফলে বিভিন্ন অংশ খুঁজতে হয় না ।

এখন বল তোকে এত কথা কেন বললাম? মামার সাথে কথা বলতে বলতে, কাজ কতটুকু হল তা দেখলাম। এখনো কাজ চলছে- 

# এই …. একটু জ্ঞান দিলে আর কি! সুযোগ পেলে যা কর আর কি, এ আর নতুন কি ?

% না। তোর ডিলিট হওয়া ফাইল কিভাবে খুঁজে বের করা যায় সেটা বুঝানোর জন্য। এরপর নিজে নিজে বের করতে পারিস, বুঝলি।

# তা বুঝলাম। কিন্তু কিভাবে করব সেটা তো বুঝলাম না ।

% আমরা যখন ডিলিট করেছি সেটা মেমোরি থেকে ডিলিট হয় নি। শুধু টেবিল থেকে হয়েছে। মেমোরিতে কতটুকু জায়গা খালি আছে তাও জানা যায় এই টেবিল থেকে। এই টেবিলই হল সব আর একটা কথা, টেবিল থেকে ডিলিট হলেও কিন্তু মেমোরি থেকে ডিলিট হয় না। সেখানে ফাইল থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঐ জায়গায় নতুন কিছু না রাখছি। এখন বুঝেছিস, কেন ড্রাইভে হাত দিতে না করেছিলাম!

# মামা, তাইতো বলি ১০ জিবি রাখতে ১ মিনিট সময় লাগে কিন্তু ডিলিট হয়ে যায় ৫ সেকেন্ডে। কিভাবে সম্ভব ! এখন বুঝতে পারলাম।

% শুধু তাই নয়,

কিভাবে তথ্য সংরক্ষণ এবং উদ্ধার করা যায় তা নিয়ন্ত্রণ করতে এই টেবিলগুলো ব্যবহার করা হয় যা ফাইল সিস্টেম  নামেও পরিচিত।  বিভিন্ন প্রকারের টেবিল আছে যেমন- FAT, NTFS। মজার বিষয় হল, FAT ফাইল সিস্টেমে ৪ জিবির বড় ফাইল রাখা যায় না, এটা অনেকে জানেই না ! 

এখন বল, তোর ভিডিও কি আমরা খুঁজে পাব?

# পাব মামা, কেন পাব না? কিন্তু টেবিলে যেহেতু নাই তাহলে তো সম্পুর্ণ ড্রাইভই  খুঁজতে হবে।

% আনডু তাই করেছে। শুধু এই ফাইল না আগের যত ডিলিট হওয়া ফাইল আছে সে এখন সব খুঁজে বের করবে। ফাইলের নাম ঠিক নাও থাকতে পারে, কিন্তু ফাইলের ভিতরের সব ঠিক থাকবে।

# নামে কি সমস্যা?

% যেহেতু আমরা ডিলিট করে দিয়েছি তাই টেবিল থেকে নাম মুছে গেছে।

# ব্যাপার না, ফাইল পাওয়া গেলেই হলো।

ইতোমধ্যে আনডু সব ফাইল খুঁজে বের করেছে। মামা সব ফাইলগুলো শর্ট করে একই  ধরনের ফাইল একসাথে করেছে। মোট ৫২ টি ফাইল পেয়েছি আমরা। এর মধ্যে ১৪ টি ভিডিও ফাইল। নাম দেখে কোনকিছু চেনা যাচ্ছে না।

# মামা, এখন মনে হয় আমি পারব। সবগুলো একটা একটা দেখতে হবে। আর তুমি তো আছো ই ।

% হুম দেখতে থাক, আর তুহিনের কি খবর? এখনো রোবট বানায়?

# বানায়, এটা ছাড়া আর কিছু করে না। সারাদিন রোবট নিয়ে পরে থাকে।

% ঠিক আছে তাহলে একদিন তার সাথে দেখা করতে যাব। বলে রাখিস তুহিনকে।

# ঠিক আছে মামা, সে তো তোমাকে অনেক পছন্দ করে। অনেক খুশি হবে। কিন্তু তোমার মোবাইল সাবধান! হি হি হি।

% হা হা হা… ঠিক আছে। আমার মোবাইল দেখে রাখার দায়িত্ব তোর। যাই এখন একটু বের হতে হবে। বাইরে যা ঠান্ডা! ৫/৬ টা কাপড় পরে বের হতে হয় যাতে ভিতরের তাপ বের হতে না পারে আর বাইরের বরফও যেন ভিতরে যেতে না পারে।  ভালো থাকিস…

কথা বলছি আর ভিডিও ফাইলগুলো চালিয়ে দেখছি। ৬ নাম্বারে গিয়ে পেয়ে গেলাম আমার ভিডিও টা। 

# পেয়েছি মামা, বাঁচালে আমাকে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

%  ধন্যবাদ দিতে হবে না, যা গিয়ে পড়াশোনা কর। আপা যদি দেখে তুই পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব করছিস তাহলে আমার তোদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিবে।  

# আরে মামা এটাও পড়াশোনার কাজ। বুধবার তো একসাথে খেলা দেখছি?

% ইন শা আল্লাহ, সব ঠিক থাকলে বুধবার দেখা হচ্ছে।

# ওকে মামা, আল্লাহ হাফেজ…

% আল্লাহ হাফেজ।

কথা শেষ করেই তুহিনকে ই-মেইল দিয়ে রাখলাম। ভিডিও ফিরে পেয়েছি আর মামা তোর সাথে দেখা করবে।

মামা থাকাতে এই যাত্রায়ও বেঁচে গেলাম।


[1] স্কেচবুক (কাল্পনিক) – ছবি এঁকে অন্যকে বুঝানোর সফটওয়্যার।

আরো গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published.