ডিজিটাল কেনাকাটা – ২

এই দোকানদার মামা, মোটামুটি সবই বোঝে। এর এই সুযোগটা নিতে হবে। মামা আমাকে মাইম্যাপে কন্ট্রিবিউটর আইডি খুলে দিয়েছিল। আমি বিভিন্ন লোকেশন যোগ করতে পারি, কিন্তু তা যথাযথ অনুমতির পর ম্যাপে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থান যোগ করা ছাড়াও এখানে আমি ঐ স্থান/স্থাপনাগুলোর বিষয়ে মতামত দিতে পারি ছবিও যোগ করতে পারি। এইগুলো করলে আমি আবার কিছু রিওয়ার্ড পয়েন্ট ও পাই। যাইহোক, এখান থেকে কিছু পয়েন্ট কামিয়ে নেয়া যাক।

# আরে মামা, আপনি চিন্তা করেন কেন ? আমি আছি না ! আমি আপনার দোকান ম্যাপে যোগ করে দিবো। কি যেন আপনার দোকানের নাম?<

দঃ মামা “Dream Shop BD”.  আগে নাম ছিল “আধুনিক কাপড় বিতান”। আমার ছেলে ওয়েবসাইট করার সময় এই নাম দিল। এখন আগের থেকে বেচা-কেনা ভাল, কার্ডে কিন্তু ই-মেইল অ্যাড্রেস ও আছে। # মামা, খুব সুন্দর নাম। আপনি আম্মু কে জামা দেখান, আমি আমার কাজ করি।

দোকানদার মামা জামা দেখাতে দেখাতে, আমি কয়েকটা ছবি তুলে, কিছু তথ্য দিয়ে মাইম্যাপে মামার দোকান যোগ করে দিলাম। এই দিকে আম্মুর জামা কেনা শেষ এখন আপুর জামা কিনছে। দোকানদার মামার সাথে আম্মুর খুব জমেছে। আর আম্মু প্রায় সব কাপড়ই নিচে নামিয়ে ফেলেছে। দেখে আমার দোকানদার মামার জন্য খুব মায়া হচ্ছে। এই সব আবার ভাজ করতে কম করে হলেও দুই ঘন্টা লাগবে।

দোকানের কার্ডের দিকে চোখ পড়তেই ওয়েবসাইটের কথা মনে হল। সাথে সাথে ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখি প্রায় সব জামার ছবিই দেয়া আছে। আমার নিজের উপর রাগ হল, কেন এটা আগে দেখলাম না৷ যাইহোক, দেখি কি করা যায়।

# মামা, ওয়েবসাইটে কি সবই আছে ?

দঃ  জ্বী মামা, সবই আছে। তবে অর্ডার পাই কম। মানিক বলল, কিছু টাকা দিয়ে নাকি মার্কেটিং করা লাগবে (মানিক হলো দোকানদার মামার ছেলে) কিন্তু আমি এইসব বুঝি কম। কোথায় কি টাকা দিবে, আর আমি নাকি কাস্টোমার পাব। কেন মামা, কি হইছে? ওয়েবসাইট চলে না ?? ফাজিলটা কাল বলল সব ঠিক আছে, কিন্তু আবার টাকাও চায়!!

বুঝলাম কোন কারনে মামা ক্ষেপে আছে। আর ক্ষেপবেই না কেন ?? নিশ্চয়ই এইসব এর জন্য মামা অনেক টাকা দিচ্ছে, কিন্তু ফল পাচ্ছে না । এই তো সুযোগ,  মামাকে  একটু জাদু দেখাই।

# মামা, চলে মানে, দৌড়ায়! খুব সুন্দর করে তৈরি করেছে মানিক।

যাক, মামা একটু খুশি।  নিজের ছেলেকে নিয়ে একটু সুনাম করল। ছেলে বড় হয়ে নাকি রোবটিক্স নিয়ে পড়তে চায়। বাসায় রোবট বানায়। একটা চোর ধরার যন্ত্রও নাকি তৈরি করেছে। বাসায় একটা আছে, দোকানেও একটা লাগাবে। বাসায় বসে দোকানে কে কি করে সবই তিনি দেখতে পান। কথায় কথায় জানা গেল দোকানদার মামার নাম মোফাজ্জল হোসেন।  কথা বলার মাঝে আমি আবার ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে ফিরে গেলাম।

# মামা, তুমি কিন্তু এত কষ্ট না করলেও পারতে !

আমার কথা শুনে তো আম্মু আর মোফাজ্জল মামা (দোকানদার) দুইজনই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো, যেন আমি গুরুত্বপুর্ন কাজের মাঝে একটা কৌতুক বলছি। আর আম্মুর একটু মেজাজও খারাপ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়ার আগেই আমি কথা বলা শুরু করলাম।

# আরে মামা, তোমার ওয়েবসাইটেতো সব জামার ছবি আছে। এখানে দেখেই তো দেখাতে পার। তাহলে তোমাকে আর এমন করে জামা খুলে খুলে দেখাতে হবে না, অনেক সময় বাঁচবে। শুধু তাই নয়, তুমি একইসাথে অনেক কাস্টোমারকে জামা দেখাতে পারবে ।

এবার, দুইজনকেই কৌতূহলী মনে হল। কিন্তু আম্মু মনে হয় একটু উল্টাপাল্টা বুঝেছে।

~ এই কি বলছিস তুই? দোকানে এসে আমি ওয়েবসাইটে জামা দেখব কেন?

# আরে আম্মু, এটাই তো মজা। এইযে তুমি ১০০ টা জামা নামিয়ে, খুলে খুলে ডিজাইন দেখছো, তাতে কি তোমার সময় বেশি লাগছে না ?? এর থেকে তুমি এই ১০০ টা জামা ওদের ওয়েবসাইটে দেখে ভালো লাগলে শুধু ঐ জামাগুলো নামিয়ে দেখতে পারতে। তাতে তোমার সময় কম লাগত, আর মামার ও এই সবগুলো আবার ভাজ করে সময় নষ্ট করতে হত না ।

দঃ আপা, মামায় কিন্তু একদম ঠিক কথা বলছে। বাকি জামাগুলো আর না নামাই। আপনি আমাদের ওয়েবসাইট থেকেই দেখেন।

এই বলে মোফাজ্জল মামা, ড্রয়ার থেকে ট্যাব বের করে দিল। আমি ভেবেছিলাম আমার মোবাইল ফোন থেকেই দেখাতে হবে।

# মামা, সব জামা আছে তো?

দঃ জ্বী মামা, সব আছে। কোন জামা কয়টা আছে তাও দেখা যায়।

#  কি বল মামা? এইগুলার দেখভাল করে কে ??

আমার প্রশ্ন শুনে মামা মনে মনে খুশি হল।  নিচের থেকে একটি বার কোড রিডার[1] বের করে দেখাতে লাগলো উনি এই কাজগুলো কিভাবে করে। আর এইদিকে আম্মু আমার আর মোফাজ্জল মামার কথা শুনতে শুনতে ওয়েবসাইটে জামা দেখছে।

দঃ এই যে দেখেন মামা। এইটা দিয়ে সব হিসাব রাখি। আগে অনেক ঝামেলা হত। দিনশেষে বসে বসে হিসাব মিলাতে হত। আর এখন হিসাব রাখার কোন ঝামেলা নেই,  সব হিসাব এইখানে হয়ে যায়। নতুন জামা আসলে সেগুলোর তথ্য এখানে দিয়ে দেই, কয়টা জামা, দাম কত, কোনটা কাদের জন্য, কোনটা কত বড় ইত্যাদি। আর বিক্রি হলে এই বার কোড রিডার দিয়ে সহজে পড়ে সফটওয়্যারে দিয়ে দেই, তখন সেই জামা তালিকা থেকে একটা কমে যায়। কোন ঝামেলা নেই, খুব সহজ। আয় ব্যয়, কোন জামা কতগুলো আছে এই সবকিছু এক নিমেষেই বের করা যায় এই সফটওয়্যার থেকে।

আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে, আম্মুর আকাশী জামার বিল তৈরি করে ফেলল মোফাজ্জল মামা।

দঃ আপা, আপনি জিতছেন। আপানাকে কেন যেন আপন আপন মনে হইছে, তাই কম দাম চাইছি। গত সপ্তাহে এই রকম জামা ছয়টা নিয়ে আসছিলাম, এইটাই সর্বশেষ জামা। বাকিগুলো ৩০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করছি। 

মামার কথা শুনে মনে হল আম্মু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

~ আরে ভাই, কি যে বলেন! মাত্র তো শুরু, আপনার দোকান থেকে আরও অনেক জামা কিনব। এখন এই লাল জামাটা একটু দেখান।

বলতে বলতে আম্মু ট্যাবে আমাকে জামাটা দেখালো। আর ঐ দিকে মামা কাপড় ভাজ করা রেখে লাল জামাটা বের করে দেখালো। দেখেই আম্মুর পছন্দ হয়ে গেছে। এখন নিজেকে অন্তত গাধা থেকে ঘোড়া তে উন্নত করতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে। কম করে হলেও ১ ঘন্টার কাজ ১০ মিনিটে হয়ে গেছে। এতে আমি, আম্মু, আর দোকানদার মামা সবাই খুশী।

দঃ মামা, তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান। অনেক কিছু জানো। তোমার বুদ্ধিতে কত সহজে তোমার আম্মু জামা কিনে ফেলল আর আমারও কোন কষ্ট হল না। এখন বল মামা, তুমি কি নিবে ?

# আরে মামা কি যে বল না, এইসব তো এখন সবাই জানে। আমি তো শুধু সঠিক সময়ে মনে করেছি মাত্র। কিছু লাগবে না আমার।

~ এই ইমু, তুই না টি-শার্ট কিনবি?                                

# হ্যাঁ আম্মু, তাই তো। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

কিভাবে যে ভুলে গেলাম! টি-শার্ট কিনে দিবে এই শর্তেই আমি আজ আসতে রাজি হয়েছি। আর এখন না কিনেই চলে যাচ্ছিলাম। আম্মুর কথা শুনে মামা আমার দিকে ট্যাব এগিয়ে দিলো  –

দঃ মামা, এইবার তুমি বল কোনটা দিব। এইটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য উপহার।

মামার কথা শুনে তো আমি আর আম্মু অনেক খুশী। অনেক খুঁজে একটি টি শার্ট বের করলাম। একদম কালো, বুকের মাঝে গোল, অনেক টা অন/অফ সুইচের মত একটা চিহ্ন আছে।

কেনাকাটা শেষে, আম্মুর সাথে বাসায় ফিরে আসলাম। আসার সময় মোফাজ্জল মামা আমার ফোন নাম্বার রেখে দিল। আর বলল মানিকের সাথে আমাকে নাকি আলাপ করিয়ে দিবে। তিনি নাকি এখন ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চান।

ইমি আপুর জামা অনেক পছন্দ হয়েছে কিন্তু ছোট হয়েছে, এর বড়টা হলে ঠিক হবে। আমি জামার ছবি তুলে তাদের ই-মেইল করলাম – এই জামাটি পরিবর্তন করে এর বড়টা নিতে চাই।  একটু পরেই উত্তর পেলাম (দেওয়া যাবে, কিন্তু আগামী শনিবার দোকান থেকে নিয়ে আসতে হবে)।

আবার শনিবার !!!!

আম্মুকে জানানোর পর, আম্মু বলল, এইবার আম্মু যেতে পারবে না। মামা কে নিয়ে যেতে হবে। শুনে মনে মনে আমি খুশিই হলাম। প্রায় এক মাস হল মামার কোন দেখা সাক্ষাত নেই। মামা  হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। আর তখন একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হল ই-মেইল।

মামাকে ই-মেইল করে রাখলাম-

প্রিয় মামা,

অনেকদিন হল তোমার সাথে দেখা হয় না । আম্মু জরুরি কাজে আগামী শনিবার আমাকে তোমার সাথে কোথায় যেন পাঠাবে।

তোমার অপেক্ষায়,

ইমু।

ইচ্ছে করে নিউ মার্কেটের কথা লিখি নাই। কারন, মামা কেনাকাটা খুব একটা পছন্দ করে না । যাইহোক, পরদিন বিকেলে উত্তর পেলাম।

========== 

 ওকে মামা ।

========== 

যা বুঝার, আমি বুঝে ফেলেছি। শনিবার মামার সাথে দেখা হচ্ছে।


[1] বার কোড রিডার, লম্বা লম্বা দাগ টানা কোড পড়ার যন্ত্র

আরো গল্প