আমি আর মামা ৯ টার দিকে বের হলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী রামপুরা থেকে পাতাল ট্রেন[1] দিয়ে মাত্র ৩ মিনিটে শাহবাগ । সেখান থেকে অটোকারে[2] করে নীলক্ষেত । অটোকারগুলো দারুন, গন্তব্য ঠিক করে দিলে অল্পসময়েই পৌঁছে দেয়। আমরা মাত্র ৪ মিনিটেই পৌছে গেলাম নিউ মার্কেটে।
নিউমার্কেটে মামার সাথে সাথে হাটতে হাটতে গত সপ্তাহে কি হয়েছিল তা সংক্ষেপে মামাকে বলে রাখলাম। ম্যাপে দেখাচ্ছে ৪ মিনিটের হাটার রাস্তা। কিন্তু আমাদের ৫ মিনিট লাগবে মনে হচ্ছে। মামা ঘড়ি দেখে বলল-
% মাত্র ১৬ মিনিটে বাসা থেকে নিউ মার্কেটে। এটা আমাদের সময় তো কল্পনাও করা যেত না। কম করে হলেও ২ ঘণ্টার রাস্তা ১৬ মিনিটে আসলাম।
আমি তো এই ১৬ মিনিটের হিসাবই মেলাতে পারছি না । পাতাল ট্রেনে ৩ মিনিট, অটোকারে ৪ মিনিট, হাটার রাস্তা ৪ মিনিট, মোট ১১ মিনিট হয়। ও মনে পড়েছে। বাসা থেকে পাতাল ট্রেনের স্টেশনে আসতে ৫ মিনিট লেগেছিল তা ভুলেই গিয়েছিলাম। মামার কথা শেষ হতে না হতেই আবিষ্কার করলাম আমরা দোকানের সামনে হাজির। দোকানে একটা ছেলে বসে আছে, বয়সে আমার সমানই হবে।
তবে এন সি পি [3] (National Citizen Profile) এর লিঙ্ক আমাকে মানিক দিয়েছিল তারচেয়ে গায়ের রং একটু কালো। এন সি পি এর কল্যাণে এখন আর কাউকে বেশি প্রশ্ন করতে হয় না । যে যাকে যতটুকু জানাতে চায় তার দেখার অনুমতি দিয়ে লিঙ্ক শেয়ার করে দিলেই হয়। আমিও আমার লিঙ্ক মানিক কে দিয়েছিলাম। মানিক আমাকে দেখেই চিৎকার করে ডাকতে লাগলো-
মাঃ আরে ইমু ভাই। আসো ভিতরে আসো।
অনেকদিন পর কেউ আমাকে তুমি সম্বোধন করলো। সবসময় তুই শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্থ।
# কেমন আছো তুমি? মোফাজ্জল মামা নাই ?
মাঃ না, আব্বু একটু বাইরে গেছেন। চলে আসবেন। এই যে তোমার জামা।
# ও, ভেবেছিলাম মোফাজ্জল মামার সাথে আমার এই আসল মামাকে পরিচয় করিয়ে দিব। যাইহোক উনি হলো, আমার রাহুল মামা। বিজ্ঞানী মামা।
বলেই আমি হেসে দিলাম। মামা মনে হয় একটু লজ্জা পেয়েছে। মামার বয়স আমার দ্বিগুন হলেও আমাদের কাজকর্ম দেখে তা কেউ বুঝতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। মামা আর মানিক নিজেরাই পরিচয় হয়ে নিল। মানিকের অনেক পিড়াপিড়িতে মামা তার এন সি পি এর লিঙ্ক টা দিল। কিন্তু আমি জানি এই লিঙ্কে মামার নাম ঠিকানা ছাড়া বাকি আর কোনকিছুর দেখার অনুমতি দেয়া নাই। আমি মামার দিকে তাকালাম, আর সাথে সাথে মামা চোখ টিপে আমাকে চুপ থাকতে বলল। মামা সাধারনত সবার সাথে তার কাজকর্ম নিয়ে বেশি কথা বলতে চায় না।
% এই ইমু চল, এইবার আমার কাজটা সেরে ফেলি।
এই কথা শুনেই মানিক আমার হাত চেপে ধরলো। বলল তার নাকি হেল্প লাগবে।
মাঃ ইমু ভাই, আব্বুর কাছে তোমার অনেক কথা শুনেছি। আব্বু তোমাকে অনেক পছন্দ করে। আমার একটু সাহায্য লাগবে।
# কি সাহায্য করতে পারি, বল?
মাঃ আব্বু কিছুতেই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চায় না। আমি কোনমতেই বুঝাতে পারছিনা যে, ডিজিটাল মার্কেটিং করলে আমাদের এই ব্যবসার আরও উন্নতি হবে।
কথা শুনে আমি মামার দিকে তাকাতেই মামা ঘড়ি দেখে ইশারা করলো আমাদের হাতে সময় আছে।
# ও এই কথা ! আমি তো ভেবেছিলাম কিনা কি? তুমি বলেছ?
মাঃ বলেছি, ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিতে। তাহলে বেশি ক্রেতা পাব। কিন্তু আব্বু রাজি না। বলে, কেউ আসবে না টাকা গুলো জলে যাবে।
আমাদের কথা শুনে মামা আর চুপ থাকতে পারলো না।
% ডিজিটাল মার্কেটিং তো শুধু বিজ্ঞাপন না। আরো অনেক কাজ আছে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং করলেই যে পরদিনই কাস্টোমার চলে আসবে তাও ঠিক না। একমাস পরও আসতে পারে। তবে এটা প্রমাণিত যে সঠিক উপায়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারলে আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যবসা দ্বিগুণ হবে।
মামার কথা শুনে, মানিকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। আর আমি মনে মনে ভাবলাম সবার শনিবার তো আর আমার শনিবার না । মানিকের কপাল ভাল আজ আমার সাথে মামা এসেছে। ওরা দু’জন কথা বলতে লাগলো আর আমি শুনছি।
মানিক ও আমার মামাকে মামা ডাকতে লাগলো। আমি কোনোভাবে হিসাব মেলাতে পারলাম না, তার বাবা আমার মামা হলে আমার মামা তার মামা হয় কিভাবে??
মাঃ কিন্তু মামা, এইগুলা আব্বুকে বোঝাই কি করে ?
% শুনেছি তোমাদের নাকি ওয়েবসাইটও আছে ?
মাঃ জ্বী মামা, আমি নিজে তৈরি করেছি। খুব সহজ।
মামা মনে হয় একটু অবাক হয়েছে। মানিকের বয়সে মামা কম্পিউটারে সারা দিন শুধু গেমস খেলতো। আর তখন শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররাই ওয়েবসাইট তৈরি করত। আর এখন যে কেউ চাইলেই নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সবকিছু অনেক সহজ।
% চমৎকার, তো এস ই ও (SEO) করেছো?
মাঃ না মামা, এইসব বুঝি না। একটা ই-কর্মাস টেমপ্লেট থেকে তৈরি করেছি। তবে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করি।
% হুম বুঝলাম। শুনো-
মাঃ জ্বী মামা।
% শুধু যে টাকা দিয়েই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হয় তা ঠিক না । টাকা ছাড়াও করা যায়।
মামার কথা শুনে মানিক মনে হয় একটু অবাক হয়েছে। সে জানালো তার এক বন্ধু ডিজিটাল মার্কেটিং করে দিবে বলে সবসময় টাকা চায়।
মাঃ কিন্তু মামা শাহীন তো এই কথা বলল না। সে তো বলে টাকা ছাড়া নাকি করা যায় না। আমার জন্য নাকি সে কম টাকা রাখবে।
মামা মানিকের কথা শুনে তেমন একটা পাত্তা দিল না।
% মানিক এইসব বাদ দাও। তুমি এস ই ও (SEO) শিখ। আর চাচা কে কিছু বলার দরকার নাই। তুমি টাকা ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে শুরু কর। এরপর দেখবে চাচা নিজেই তোমাকে টাকা দিবে।
মামার কথা শুনে তো আমার মাথার ভিতর একটা ঝড় বয়ে গেল। মোফাজ্জল মামা আবার রাহুল মামার চাচা হয় কিভাবে? ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমি বললাম –
# ও তুমি মোফাজ্জল মামার কথা বলছো?
% হুম তাই তো বললাম, চাচা কে কিছু বলার দরকার নাই। কি বলিস তুই?
মনে মনে ভাবলাম কথা বাড়িয়ে আর লাভ নাই।
# হুম, ঠিকই বলেছো।
কিন্তু এস ই ও কি মানিক তা জানে না । তাই সে মামার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলো। আর মামা তাকে কিছু লিঙ্ক দিল আর কিছু কিছু বিষয় বুঝালো। তাদের আলোচনা থেকে আমি যা বুঝলাম তা হল-
এস ই ও হল অনেক পুরাতন একটা প্রযুক্তি। কিন্তু এখনো ভাল কাজ করে। নতুন পুরাতন সব সার্চইঞ্জিনই এখনো এস ই ও সাপোর্ট করে। আর এটা হল এমন একটা পদ্ধতি যা দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনতে পারব। আর তা হলেই আমাদের ব্যবসা ভালো চলবে। কারণ মোটামোটি সবাই কোনকিছু খোঁজার পর প্রথম পৃষ্ঠায় যা থাকে সেখান থেকেই কিনে। প্রায় সব সার্চের ১ লাখের উপর ফলাফল থাকলেও খুব কম মানুষই দ্বিতীয় পৃষ্ঠা দেখে। নতুন সার্চইঞ্জিন “ওয়ান সার্চ” [4]এই এস ই ও অনেক প্রোমোট করছে। এখন যেহেতু মোটামুটি সবাই ওয়েবসাইট বানায় তাই অনেক ভুল/ অপ্রতুল তথ্য থাকে এবং সার্চ ইঞ্জিন গুলাও সঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে অনেক সমস্যা হয়। তাই সব সার্চ ইঞ্জিনই চায় ওয়েবসাইট গুলো যেন সঠিকভাবে এস ই ও করা থাকে।
কথা বলতে বলতে মামা বারবার ঘড়ি দেখছে। বুঝলাম মামা যেতে চাচ্ছে। আজ আবার আমাদের রিক্সায় ঘোরার কথা। দেরি হলে শেষে আবার মেট্রো না হয় অটো গাড়িতে যেতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার আর মামার মাঝে টেলিপ্যাথি কাজ করে। যদিও ১০ মিটারের মধ্যে কাজ করে এমন ডিভাইস “মাইন্ডফোন” [5] এখন পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কোন ডিভাইস লাগে না।
# মামা, তোমার না কাজ আছে ?
% হুম তাই তো। মানিক আজ থাক। যেতে হবে ।
মাঃ ওকে মামা, তবে যাবার আগে কিছু টিপস দিয়ে যান।
এরপর মামা কিছু টিপস দিল-
- ওয়েবসাইটে কোন ভুল থাকা যাবে না।
- প্রতিটা ছবির সঠিক বর্ণনা দিতে হবে। কারণ এই বর্ণনা থেকেই সার্চ ইঞ্জিন ছবি সম্পর্কে একটা ধারনা পায়।
- সব জামার বর্ননা দিতে হবে। যেমন, কি রঙের, কাদের জন্য, দাম কত। তাহলে যারা খুঁজবে তারা সঠিক জামাটি তাড়াতাড়ি পাবে।
- আর মানুষ যেসব শব্দ ব্যবহার করে সেসব শব্দ বেশি বেশি ব্যবহার করতে হবে।
আর এইসবই হল অর্গানিক মার্কেটিং এর অংশ। ইন্টারনেটে এমন আরো অনেক টিপস পাবে। আর এরপরও কোন সম্যসা হলে আমাকে ইমেইল করে জানাতে পার। জামা নিয়ে আমি আর মামা বের হব এমন সময় মোফাজ্জল মামার সাথে দেখা। আমি দুই মামাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
আর খেয়াল করলাম এইবার রাহুল মামা মোফাজ্জল মামাকে কি বলে? হয়তো নানা/ দাদা ও বলতে পারে।
না আমার ধারনা ভুল, দুজন দুজনকে ভাই সম্বোধন করল। যাক বাঁচা গেল। বিদায় নিয়ে নিউমার্কেট থেকে আমরা গেলাম নীলক্ষেতে । শুনেছি আগে নাকি এখানে শুধু বই পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এখানে অনেক ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট পাওয়া যায়। মামাও মনে হয় একটা গ্যাজেট কিনবে। প্রায় এক ঘন্টার বেশি হবে, মামা অনেক খুঁজলো কিন্তু পেলো না ।
# মামা, ১ টা বাজে। যাবা না ?
% হুম। তাইতো !
আমার কথা শুনে মামা তাড়াতাড়ি কাকে যেন ফোন করল। তারপর-
% ইমু ।
# জ্বী, মামা।
% একটা ঝামেলা হয়ে গেছে,আমাকে একটু যেতে হবে।
# তাহলে মামা, তোমার হালিম আর রিক্সার কি হবে ?
% চিন্তা করিস না, কথা যেহেতু দিয়েছি সব হবে, তবে আজ না ।
এরপর মামা মোবাইল বের করে আগামী এক সপ্তাহের পরিকল্পনা দেখে বলল
% আজ তো শনিবার, আগামী মঙ্গলবার তোকে নিয়ে আবার বের হব।
মনে মনে ভাবলাম, তাই তো আজ তো শনিবার এতো আশা করা ঠিক হয় নি। মেট্রো চলে গেছে তাই অটোকারে করে বাসায় চলে আসলাম। মাত্র ২৪ টাকা ভাড়া লেগেছে।
আমাকে নামিয়ে মামা আবার অটোকারে করেই শান্তিনগরে চলে গেল।
জামা পেয়ে ইমি আপু অনেক খুশী। আর আম্মু অনেক খুশী, অনেকদিন পর মামাকে দিয়ে ঝামেলা ছাড়া একটা কাজ করানো গেল। আর আমিও খুশি কারণ আগামী মঙ্গলবার মামা আমাকে নিয়ে আবার বের হবে।
রাতে মানিকের ই-মেইল পেলাম। মামাকে নিয়ে যাবার জন্য সে আমাকে ধন্যবাদ দিল। দেখতে দেখতে আমার শুক্র-শনি শেষ। কাল থেকে আবার ক্লাস শুরু।
[1] পাতাল ট্রেন (কাল্পনিক), মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করে এমন রেলগাড়ি
[2] অটোকারে (কাল্পনিক), আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ চালকবিহীন গাড়ি
[3] এন সি পি (কাল্পনিক), দেশের সব নাগরিকের তথ্য রাখা হয় এখানে ৷
[4] ওয়ান সার্চ (কাল্পনিক), ইন্টারনেটে কোণ কিছু খোঁজার জন্য ব্যবহার করা হয় ।
[5] মাইন্ডফোন (কাল্পনিক), বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে কথা না বলেও মনের ভাবের আদান প্রদান করা যায়