আগামী বৃহস্পতিবার থেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। শান্তি আর শান্তি। কিন্তু এর আগে যতসব ঝামেলা। বিজ্ঞান বিষয়ের স্যার অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে, সাইবার সিকিউরিটির উপর একটি পাঁচ মিনিটের ভিডিও বানিয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে জমা দিতে হবে। সব কিছু ভালোই যাচ্ছিল, দুই দিন একটানা অনেক কাজ করলাম। ওয়ানসার্চে [1] অনেক খুঁজে, কিভাবে কি বলব তা সাজালাম। শুক্রবার সারাদিন কাজ করে রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় রাত বারটা বেজে গেল। যদিও দশটার পর রাত জাগলে আম্মুর বকা খেতে হয়। যাইহোক, এখন ঘুমাই বাকি কাজ কালকে।
শনিবার
সকালে ঘুম থেকে উঠেই কম্পিউটার অন করলাম। চালু হল না। ভাবলাম বাসায় নিশ্চয় ইলেক্ট্রিসিটির কোন কাজ হচ্ছে। গত চার বছরে একবার ও ইলেক্ট্রিসিটি যায় নি। তবে বাসার কোন কাজ করতে হলে আমাদের মেইন সুইচ বন্ধ করে কাজ করতে হয়। তখন অবশ্যই ইমারজেন্সি লাইটগুলো জ্বলে। কিন্তু এখন তো তাও জ্বলছে না। তাহলে সমস্যাটা কোথায় ? মাথা একদম কাজ করছে না।
আম্মুর ডাকে হুঁশ ফিরে এলো। পাঁচ মিনিটে ঘেমে একদম অবস্থা খারাপ। ঘড়িতে দেখি আটটা দশ বাজে, যেখানে সকাল আটটার মধ্যে সবাই নাস্তা করে ফেলে। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলাম। আম্মুকে কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না। বললে কোন লাভ তো হবেই না আরো ঝামেলা বাড়বে। কোন সাহায্য তো করতে পারবেই না , উল্টো আরও বকাবকি করবে। আর যদি জানতে পারে আমি রাত জেগেছি তাহলে তো আজ আমি শেষ। নাস্তা শেষ করে চুপচাপ ঘরে চলে আসলাম । যা করার আমাকেই করতে হবে।
এর আগেও এমন হয়েছিল একবার। তখন মামা এসে সব ঠিক করে দিয়েছিল। কিভাবে ট্রাবল শুট [2] করতে হয় তখন তা দেখেছি। কোনকিছু না চললে একদম প্রথম থেকে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখতে হয়। একদম ধাপে ধাপে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। আমিও ঠিক সেভাবে ট্রাবল শুট করা শুরু করলাম। কম্পিউটারটা পুরনো হয়ে গেছে । এখন আর কেউ এই অক্টা-ফাইভ ৫ গিগা হার্জের [3] মডেলটা কিনতে চায় না। এটা মামার সাথে গিয়ে কিনেছিলাম, আইডিবি থেকে। আর নীলক্ষেত থেকে একটা টাচ প্যাড, মাঝে মাঝে একটু আঁকাআঁকি করি আর কি। টাচ প্যাড থাকলে আর কি-বোর্ড/ মাউস লাগে না। টাচ প্যাড দিয়ে টাইপও করা যায়।
মাথা ঠান্ডা করে ট্রাবল শুট করা শুরু করলাম। প্রথমে সব কানেকশন গুলো চেক করলাম। সবই ঠিক আছে। সুইচ ও অন করা। কিন্তু তারপরও চালু হচ্ছে না। এমনি কম্পিউটারটা কে স্লো মনে হচ্ছিল। ১৬ জিবির দুইটা র্যাম ছিল, তারপরও কেমেস্ট্রির “কেমিফাই” [4] চালু করতেই ২ মিনিট সময় লাগতো। মামাকে বলেছিলাম নতুন কম্পিউটার লাগবে, এটা আর চলছে না। মামা আমাকে হতাশ করে বলল এটা নাকি আরও ৩/৪ বছর চালাতে হবে। এরপর নাকি কোয়ান্টাম কম্পিউটার [5] কিনে দিবে।
আমাদের স্কুলে একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মডেল আছে। ইমি আপুদের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উপর একটা অধ্যায় আছে। কিন্তু আমাদের নাই, তবে শুনেছি কোয়ান্টাম কম্পিউটার আসলে নাকি এখনকার কোন প্রযুক্তি কাজে লাগবে না। সব আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। এখন যেমন সব ০/১ দিয়ে কাজ করে, তখন নাকি এর বাইরেও অনেক কিছু থাকবে। শুধু তাই না আমাদেরকেও নাকি নতুন করে সব প্রোগ্রামিং শিখতে হবে। এটা শোনার পর থেকে আমার আর প্রোগ্রামিং শিখতে মন চায় না। কাজে না লাগলে শিখে লাভ কি? মামা আমার এ কথা শুনে আমাকে অনেক পঁচালো – এই সবই নাকি শিখতে হবে, এসব না পারলে নাকি কোয়ান্টাম প্রোগ্রামিং ও পারবো না। এইসব চিন্তা করতে করতে অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোন লাভ হল না। ইতোমধ্যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে শুয়ে ভাবছি কি করা যায়। এমনি মামার কল আসলো।
% কিরে কি খবর তোর? টাকা দিছিস?
# না মামা।
% মানে কি? গেমসজোনের জন্য কি আবার নতুন কোন গেমস কিনেছিস নাকি?
# আরে মামা, কি যে বল না ! তোমার ভাগ্নে কি এ রকম নাকি ?
% তাহলে কি?
# টাকা আছে, কিন্তু দিতে মনে নাই।
% খুব ভালো করেছিস। আর দিতে হবে না !
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম, মামা মনে হয় আমার উপর রাগ করছে।
# কি বল মামা, আমি আজই দিয়ে দিব।
% তোর আর দিতে হবে না, আমিই এসে দিব।
ওয়াও, তার মানে মামা আসছে! আমি তো মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম।
# কখন আসবে মামা?
% আজ না, মঙ্গলবার আসতে পারি। তোর গ্রীষ্মকালীন ছুটি কবে থেকে?
# সে তো অনেক দেরি, বৃহস্পতিবার থেকে।
% তাহলে বৃহস্পতিবারই আসি। এক সপ্তাহ থাকতে পারি। স্পেশাল মিশনে আসছি, রেডি থাকিস।
# বৃহস্পতিবার কেন ? আজ আসা যায় না ?
% আজ কেন ? তোর আম্মু বলছে আমি থাকলে নাকি তোর পড়াশোনা হয় না। তাই তোর স্কুল ছুটির সময়ই আসব।
# মামা, আমি তো বিপদে পড়েছি। তোমার সাহায্য লাগবে।
% বিপদ??? আবার কি অঘটন ঘটালি ?
# আমি কিছু করি নাই।
% তাহলে কে কি করল?
# তাও জানি না, তবে আমার কম্পিউটার আর চালু হচ্ছে না ।
% হুম, এতে আবার বিপদের কি আছে ? এটা তো সুখবর, আপা শুনলে মহা খুশী হবে। এখন কম্পিউটার বাদ দিয়ে এই কয়দিন মন দিয়ে পড়।
# মামা, কি যে বল! কম্পিউটার চালু না হলে আমি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিব কিভাবে ?
% কি অ্যাসাইনমেন্ট?
# সাইবার সিকিউরিটির উপর একটি পাঁচ মিনিটের ভিডিও বানিয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে জমা দিতে হবে।
% কাজ কতদূর?
# কাজ প্রায় শেষ। স্ক্রিপ্ট রেডি। এখন শুধু ভিডিও রেকর্ড করে, এডিট করতে হবে।
% হুম, তো কম্পিউটারের কি হল?
# জানি না মামা। চালু হয় না।
% ট্রাবলশুট করেছিস?
# হুম, চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে সিপিইউ খুলতে ভয় পাচ্ছি।
% কেন? খুললে কি হবে ?
# যদি আবার লাগাতে না পারি। উল্টা-পাল্টা কানেকশন দিলে যদি আগুন লেগে যায়! তাই আর এসব করতে যাই নি।
% হাহা। তোরে সারাদিন সময় দিলেও একটা উল্টা-পাল্টা কানেকশনও দিতে পারবি না? তোর কথা ভেবেই কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে।
# তার মানে আমি চাইলেও উল্টা-পাল্টা কানেকশন দিতে পারবো না ?
% না, পারবি না। কারন, পোর্ট / কানেক্টরগুলা এমনভাবে তৈরি যে একটা অন্যটার সাথে লাগানো যাবে না।
এরপর মামা আমাকে কিছু উদাহরণ দিল-
ছবিঃ বিভিন্ন রকমের পোর্ট এবং কানেক্টর
# মামা, সবই বুঝলাম। কিন্তু তুমি আজই আসো।
% আজ আসলে তো আবার চলে যেতে হবে। আমার আবার হাতে কিছু কাজ আছে। একেবারে শেষ করে আসতে চাচ্ছিলাম।
# মামা চলে আসো, রাতে আবার চলে যেও।
% ওকে। দেখি তোকে তোর বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারি কিনা ? আপাকে বলে রাখিস আমি আজ আসব কিন্তু থাকবো না ।
# এজন্যই তোমাকে এত ভালবাসি, মামা। তাহলে আজ দেখা হচ্ছে।
% হুম। এখন রাখি, দেখা হবে ইন শা আল্লাহ্।
# ইন শা আল্লাহ্।
ফোন রেখেই আমি আম্মু কে বলে আসলাম মামা আজ আসবে, কিন্তু থাকবে না। আম্মু অনেক অবাক হল, কারন আম্মুও নাকি আসতে বলেছিল কিন্তু মামা নাকি রাজি হয় নি। আম্মু তো আর আমার বিপদের কথা জানে না। জানলে, বুঝতো মামা কেন আসতে রাজি হয়েছে। আমি শুয়ে শুয়ে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আছি। মনের অজান্তেই হাসি পাচ্ছে। কম্পিউটার কেনার দিনের কথা মনে পড়ে গেল-
[1] ওয়ানসার্চে (কাল্পনিক), ইন্টারনেটে কোন কিছু খোঁজার জনপ্রিয় মাধ্যম।
[2] ট্রাবল শুট, কোথায় সমস্যা তা ধাপে ধাপে খুঁজে বের করার পদ্ধতি।
[3] অক্টা-ফাইভ ৫ গিগা হার্জের (কাল্পনিক), কম্পিউটারের প্রসেসর
[4] কেমিফাই (কাল্পনিক), রসায়নের সমীকরণ সহজে শেখার সফটওয়্যার
[5] কোয়ান্টাম কম্পিউটার (কাল্পনিক), প্রথাগত কম্পিউটারের বাইরে নতুন প্রযুক্তি, যা আরো দ্রুত কাজ করতে পারে