অনেক কষ্টে আম্মুকে রাজি করালাম, আমার একটা নতুন কম্পিউটার কিনে দিতে হবে। মামার পুরাতন কোর-আই ১৩ [1] অনেক দিন চালিয়েছি। কিন্তু সেটা এখন অনেক পুরনো টেকনোলজি। আমার এখন অক্টা-ফাইভ ১.৫ [2] চাই। আম্মু কম্পিউটারের জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করলো। আর মামার সাথে কথা বলার পর ঠিক হল পরের শুক্রবার আমরা কম্পিউটার কিনতে যাব। মামা বৃহস্পতিবার রাতেই আমাদের বাসায় চলে আসলো। আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি।
মামা এসে আমাকে জেরা করতে লাগলো, আমি কম্পিউটার দিয়ে কি করবো? আমি নাকি উত্তর দিয়েছিলাম, তোমার মত কবি হব। এরপর আমাকে বাসার সবাই কবি বলে পঁচাত। এখন সবাই ভুলে গেছে। এসব কথা আমি কাউকে মনে করিয়ে দিতে চাই না। এরপর মামা আবার আমাকে বিপদে ফেলল। বলল কম্পিউটারের কি কি থাকে আর কিভাবে কাজ করে এটা বলতে পারলে উনি আমাকে অক্টা-ফাইভ ১.৫ কিনে দিবেন। আর না হলে নাকি আবার একটা পুরাতন কম্পিউটার কিনে দিবেন। মামা যে মজা করেছিল তখন তা বুঝতে পারি নি। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে বললাম –
# কি আর থাকবে, মনিটর, , কী-বোর্ড- মাউস এসবই তো থাকে।
% আর কাজ করে কিভাবে ?
# কারেন্ট দিলে কাজ করে।
শুনে বাসার সবাই তো হাসতে হাসতে একদম গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । মনে পড়লে আমার এখনো হাসি পায়। ঐ দিন রাতের খাবারের পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মামা আমাকে কম্পিউটারের উপর জ্ঞান দিলেন। এই ১ ঘন্টার সারসংক্ষেপ হল –
কম্পিউটার মানুষের তৈরি ইলেকট্রনিক যন্ত্র। একে বোকা যন্ত্র ও বলা যায়। কারণ মানুষ যা শিখায় এর বেশি সে কিছু করতে পারে না। যেমন কেউ যদি কম্পিউটারকে ২+২ এর ফল ৫ হবে এমন শিখায়। কম্পিউটার নাকি তাই করবে। কি বোকা কম্পিউটার, তাই না ?!
আর যেহেতু এটা ইলেকট্রনিক যন্ত্র তাই ইলেকট্রিসিটি ছাড়া কম্পিউটার চলে না। আমি যে “কারেন্ট” বলেছি। সেটাই হল ইলেকট্রিসিটি। কারেন্ট শব্দটা ভুল। কারেন্ট এর অর্থ হল প্রবাহমান।
কোন কিছুর ইন্সট্রাকশন/নির্দেশনা না পেলে কম্পিউটার কিছুই করতে পারে না। সেটা যে কেউই দিক না কেনো, এই নির্দেশনাগুলো মানুষ ও দিতে পারে আবার অন্য কম্পিউটার ও দিতে পারে।
কম্পিউটার এই নির্দেশনাগুলো ইনপুট হিসাবে নেয়। এরপর এইগুলো প্রসেস করে আউটপুট দেয়। এই কাজগুলো করার সময় সে মেমরি এবং প্রসেসর ব্যবহার করে। আবার দরকারি ফাইলগুলো সে এসএসডি(Solid-state drive) [3] ড্রাইভে সেভ করে রাখতে পারে। যা আমরা পরে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের কম্পিউটার সব কাজই এইভাবে করে। সেটা গেম খেলা থেকে শুরু করে সিনেমা দেখা পর্যন্ত।
এই কথাগুলো আমার সারাজীবন মনে থাকবে। কারণ, পরের দিন কম্পিউটার কেনার সময় মামা কয়েকবার নানাভাবে এই কথাগুলো বার বার আমাকে বলেছে। অনেক উদাহরণ দিয়েছে। সারাদিনে মামা অনেকগুলো হার্ডওয়্যার কিনলো। এরপর বিকালের মধ্যে আমরা বাসায় চলে আসলাম। আমার কম্পিউটার কেনার মূল উদ্দেশ্যই ছিল “এন এফ এস- ডেড কিং (NFS – Dead King)”[4] খেলা। এর জন্য ভালো গ্রাফিক্স কার্ডও কিনেছি মামাকে বলে। মামা সবগুলো হার্ডওয়্যার এসেম্বল [5] করে আমাকে বললো নে তোর কম্পিউটার।
আমি তো এক লাফ দিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ালাম, কিন্তু কম্পিউটার তো আর চালু হয় না। কি একটা ইরর মেসেজ দিয়ে অফ হয়ে যায়। একি হল!! মামা কি নষ্ট কম্পিউটার কিনে আনলো তাহলে?? আমি মামার দিকে তাকাতেই দেখি উনি মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝলাম এখানে কোন একটা ব্যাপার-সেপার আছে । মামা বলল-
% তুই যা যা বলেছিস কিনে দিয়েছি। তুই এখন চালা আমি যাই।
# কি বল মামা? যাই মানে ? এটা তো চলে না।
% সেটা আমি কি জানি?
# মামা, তুমি না জানলে জানবে কে?
% চিন্তা করে দেখ, কিছু বাদ পরেছে কিনা ।
# মামা, আমার মাথায় তো কিছু আসছে না ।
% বুঝছি তোর দৌড় শেষ। শোন, শুধু হার্ডওয়্যার দিয়ে কাজ হয় না সফটওয়্যার ও লাগে।
এরপর মামা আমাকে আবার জ্ঞান দেয়া শুরু করল। সুযোগ পেলেই মামা আমাকে জ্ঞান দিত। প্রথম প্রথম ভালো না লাগলেও এখন মজা পাই, আর সেটা যদি কম্পিউটার নিয়ে হয় তাহলে তো কথাই নেই।
আমরা যদি কম্পিউটারকে মানুষের সাথে তুলনা করি তাহলে হার্ডওয়্যার হল শুধু শরীর। আর সফটওয়্যার হল প্রাণ। একটা ছাড়া আরেকটা অচল। আর সফটওয়্যার এর অন্যতম কাজ হল হার্ডওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ করা। একে অপারেটিং সিস্টেম বা সংক্ষেপে (ও এস)ও বলে।
মামার কথা শুনে আর বুঝতে বাকি রইল না যে আমাদের কম্পিউটারে এখনও সফটওয়্যার দেয়া হয় নি। কথা বলতে বলতে মামা কম্পিউটারে সফটওয়্যার ইন্সটল করা শুরু করল। ১০ মিনিটের মধ্য আমাদের কম্পিউটার একদম প্রস্তুত।
# মামা এইবার, ইন্টারনেট থেকে “এন এফ এস- ডেড কিং” ডাউনলোড করে দাও।
% ও, তাহলে এই কথা ? কিন্তু ইন্টারনেট পাবো কোথায় ? আর ইন্টারনেট পেলেও তো ইন্টারনেট থেকে কিছু ডাউনলোড করা যায় বলে আমার মনে হয় না।
# আরে মামা কি যে বল? তুমি কি জানো না , আমাদের বাসায় যে অপটিক্যাল ফাইবারের কানেকশন আছে ?
% হুম জানি। কিন্তু ইন্টারনেট থেকে কিভাবে ডাউনলোড করে তা জানি না।
মামার কথা শুনে আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। এর আগেরবার তো মামা নিজেই ডাউনলোড করে দিয়েছিল।
# মামা, তোমার কথা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
% বুঝবি কি করে? সারাদিন তো খালি গেমসই খেলিস, পড়াশোনা তো করিস না।
এরমধ্যে আবার পড়াশুনা আসলো কোথা থেকে! আমি এমন ভাব করলাম যে, এখনই কেঁদে দিব। আমার অবস্থা দেখে, মামা কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
% আরে আরে কি হল, কি হল?? আমি না করলাম কখন? দিব তো ডাউনলোড করে কিন্তু ইন্টারনেট থেকে নয়, এন এফ এস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।
# সে যাইহোক, আমি যেন আজ এন এফ এস খেলতে পারি।
% পারবি, বললাম তো।
মামা, কম্পিউটার নিয়ে কাজ করে দিল, আর ভাব দেখে মনে হচ্ছে মামা আবার আমাকে জ্ঞান দিবে।
% শোন, তোকে যদি বলি – রাস্তা থেকে চিপফুডের [6] বার্গার নিয়ে আয়। পারবি?
# রাস্তায় বার্গার পাব কোথায়? আর পেলেও রাস্তার বার্গার আনবো কেন?
% তাহলে আমাকে যে বললি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে দিতে। ইন্টারনেটে তো কিছু নাই । আমি কিভাবে কি ডাউনলোড করব?
# মামা, তোমার মাথা ঠিক আছে? দুনিয়ার সবাই জানে ইন্টারনেটে সব আছে। আর তুমি বলছ, কিছু নাই?
% না নাই। রাস্তায় যেমন বার্গার নাই, ঠিক তেমন ইন্টারনেটেও কিছু নাই ।
এরপর মামা ইন্টারনেট নিয়ে আমাকে কিছু জ্ঞান দিল। আর ঐ দিকে ডাউনলোড চলছে।
% শোন-
ইন্টারনেট হল রাস্তা। পৃথিবীর সব কম্পিউটার, এর সাথে যুক্ত। আমরা যে ওয়েবসাইট দেখি বা ডাউনলোড করি এর সবই আসে সার্ভার থেকে। আর এই সার্ভারও এক ধরনের কম্পিউটার। আমরা যা চাই সার্ভার থেকে আমাদের তা ই পাঠায়। শুধু আমরা না, দেখা যাবে একই সময়ে ১০০ জন এই গেমটা ডাউনলোড করছে। সার্ভার কিন্তু এই ১০০ জনকেই পাঠাবে। আর ইন্টারনেট হল আমাদের কম্পিউটারের সাথে সার্ভারের যোগাযোগের মাধ্যম। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে তো আমরা ওয়েবসাইটেই ঢুকতে পারি না ।
ডাউনলোড প্রায় শেষের দিকে। ইন্টারনেট বুঝতে পারলেও, সার্ভার কি তা বুঝতে পারলাম না ।
# মামা, ইন্টারনেট যে রাস্তা সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু এই সার্ভার আবার কেমন কম্পিউটার? আমাদের টাও কি সার্ভারের মত কাজ করবে?
আমার প্রশ্ন শুনে মামা একটু অবাক হল! মনে হয় একটু কঠিন প্রশ্ন করে ফেলেছি।
% আরে ভাগ্নে, খুব সুন্দর প্রশ্ন। বড়রাও তো তোর মত চিন্তা করে না। তোকে চিপফুডের বার্গারের কথা বলেছিলাম না? মনে আছে ?
# হুম, রাস্তা থেকে আনতে বলেছিলে।
% আরে ঐ টা তো তোকে বুঝানোর জন্য বলেছি। এখন শোন।
বলেই মামা আবার শুরু করলো।
সার্ভার হল রেষ্টুরেন্টের মত। ওয়েটার আমাদের জন্য ওয়েট করে মানে অপেক্ষা করে। আমরা রেষ্টুরেন্টে গেলে সে আমাদেরকে একটি খাবারের তালিকা দেয়। আমরা সেখান থেকে পছন্দ করে অর্ডার দেই। এরপর ওয়েটার আমাদের অর্ডার করা খাবার তৈরি করার জন্য বাবুর্চি কে বলে। বাবুর্চি পিছনে কিভাবে কি কাজ করে আমরা তা কিন্তু আমরা জানিও না। হয়ত এমনও হতে পারে যে, বার্গারের রুটি নেই, অন্য দোকান থেকে নিয়ে আসছে। কিন্তু আমরা এর কিছুই জানি না। আমরা শুধু বার্গারটাই দেখি, যা আমরা অর্ডার করেছিলাম।
এখন আমরা যখন কোন লিঙ্কে ক্লিক করি, তা হল রিকোয়েস্ট বা অর্ডার। সার্ভার আমাদের এই রিকোয়েস্টের জন্য সবসময় ওয়েট করে বা রেডি থাকে। যখনই আমরা ক্লিক করি তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভারের কাছে যায়। সার্ভার এই রিকোয়েস্ট পেয়ে দেখে কি চাওয়া হয়েছে। এরপর তা প্রসেস করে রেডি করে, আবার সেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের কাছে পাঁঠিয়ে দেয়। এরকম অনেক সার্ভার আছে, আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সার্ভারের কাছ থেকে তথ্য বা সেবা নেই।
চাইলে যে কারো কম্পিউটারকে সার্ভারে রূপান্তর করা যাবে। কিন্তু এর জন্য বিশেষ সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়।
এখনো ডাউনলোড হচ্ছে। মামা চেক করে দেখল, ৭০% হয়েছে।
# আচ্ছা মামা, এই যে সার্ভার আমাদের কাছে পাঠায়, সে কিভাবে জানে আমরা কোথায় আছি?
% জানবে না কেন? প্রতিটা রিকোয়েস্টের সাথে তো আমাদের আই পি অ্যাড্রেস ও যায়। সেটা দেখে সার্ভার বুঝতে পারে কে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।
# এই আই পি অ্যাড্রেস আবার কি ??
মামা মনে হয় কিছু খুঁজছে। মামা তার মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে আমার মোবাইল ফোনে কল করল। আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না ।
% এই যে আমি তোকে কল করলাম, সেটা তোর কাছে গেল কেন?
# কারন তুমি আমাকে কল করেছো, হি হি !
% যদি চীন থেকে কল করি?
# যদি বাংলাদেশের কোড দাও তাহলে আমার কাছেই আসবে, সে তুমি চাঁদ থেকে ফোন দাও আর মঙ্গলগ্রহ থেকে।
মামা এইবার আমাকে আই পি অ্যাড্রেস কি তা বুঝালো-
আমাদের মোবাইল ফোন নাম্বার যেমন নির্দিস্ট ঠিক তেমনি প্রতিটা কম্পিউটারের ও একটা নাম্বার বা ঠিকানা/এড্রেস থাকে, যেটা তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে। আর একেই বলে আই পি অ্যাড্রেস।
ডাউনলোড এখনো চলছে ৭৫%।
# মামা, সব নাম্বার তো ইউনিক না। আমাদের বাসার নাম্বারে ফোন করে যদি সাত চাপ তাহলে আমাকে পাবা আর নয় চাপলে ইমি আপুকে। কিন্তু সবাই তো আমাদের বাসার নম্বরেই ফোন করে।
% হুম ঘটনা সত্য। সব আই পি অ্যাড্রেস রিয়েল আই পি না। IP v6 থেকে কোটি কোটি আই পি অ্যাড্রেস তৈরি করা গেলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের জন্য কিছু আই পি তৈরি করি। যেমন তোদের বাসার পি এ বি এক্স যেভাবে কাজ করে, সে রকম করে। আমার জানা মতে তোদের স্কুলে একটাই রিয়েল আই পি, বাকি সব মাস্কিং করা।
# কিছুটা মাথার উপর দিয়ে গেল।
% কত উপরে?
# বেশি না এই মনে কর ১ ফিট।
% হুম, আরও ১ ফিট লম্বা হলে বুঝতে পারবি। তাড়াতাড়ি বড়-হ। তখন আর উপর দিয়ে যাবে না, কান দিয়ে ভিতরে ঢুকবে।
# মামা…
% কি?
# তাহলে কি সার্ভার বা ওয়েবসাইটগুলোরও আই পি অ্যাড্রেস আছে ?
% থাকবে না কেন? কি বললাম এতক্ষণ?
# তা তো বুঝলাম? কিন্তু তুমি কি সবগুলো আই পি অ্যাড্রেস মুখস্থ করেছ?
% আরে আমি মুখস্থ করতে যাব কেন?
# তাহলে ওদের রিকোয়েস্ট পাঠাবে কি করে?
% ও এই কথা ?
ডাউনলোড এখনো চলছে ৮৯ %। মামা এইবার আমার ফোনটা হাতে নিল।
% তোর ফোন বুকে দেখি হাজার হাজার নাম্বার।
# কি বল মামা? মাত্র ৮৫ টা নাম্বার।
% আশিকের নাম্বার বল দেখি ।
# কি যেন টেলিনরের নাম্বার, মনে নেই।
% ঠিক আছে এবার চৈতির নাম্বার বল-
# মামা, কি শুরু করলে? আমি শুধু তোমার নাম্বার বলতে পারব। বলব?
% আমার নাম্বার আমি শুনে কি করব?
# তো বাকিদের নাম্বার শুনে কি করবে? সবার নাম্বার তো ফোন বুকেই আছে। মুখস্থ করার কি দরকার।
% হুম, তাহলে আমি কেন সব ওয়েবসাইটের আই পি এড্রেস মুখস্থ করতে যাব?
মামার কথা শুনে, আমার মাথা কেমন যেন চুলকাচ্ছে। আর এই দিকে ডাউনলোড ৯৬%।
শোন, আমাদের যেমন ফোনবুক আছে ইন্টারনেটের ও ফোনবুক আছে, তবে এই ফোনবুকের নাম হল ডি এন এস (DNS)। আমরা যখন কাউকে কল করি, তখন কি করি? তার নাম আমরা ফোনবুক থেকে খুঁজে বের করি। নাম্বার মনে রাখা থেকে নাম মনে রাখা সহজ। নাম খুঁজে বের করে ফোন করি, কিন্তু আসলে কিন্তু ঐ নাম্বারেই ফোন যায়। ফোনবুক থাকাতে আমাদেরকে আর কষ্ট করে নাম্বার মুখস্থ রাখতে হয় না।
ডি এন এস ও ঠিক একইভাবে কাজ করে। আমরা যখন ওয়েব ব্রাউজারে কোন ওয়েব এড্রেস লিখে এন্টার দিই তখন ব্রাউজার প্রথমে ডি এন এস এর সাহায্য নিয়ে ঐ ওয়েব সাইটের আই পি অ্যাড্রেস বের করে। তারপর সেই আই পি অ্যাড্রেসে রিকোয়েস্ট পাঠায়।
ডাউনলোড ৯৯%।
# মামা, সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আমাদের বাসার ইন্টারনেট এত স্লো কেন ? তোমার বাসায় হলে তো দুই মিনিটেই আমার তিন জিবির গেম টা ডাউনলোড হয়ে যেত আর এতক্ষনে আমি এখন বসে বসে খেলতাম।
% আমিও তো তাই বলি। তোদের ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ কত ?
# ব্যান্ডউইথ আবার কি জিনিস?
% আরে তোদের ইন্টারনেটের স্পীড কত ?
# ও, এই ৫০ এমবিপিএস হবে ।
% না, ৬৪ হবার কথা ।
# তাই হবে …
% শোন, কম্পিউটারের সব কিছু ২ এর গুণিতক হয়, ২, ৪, ৮, ১৬,৩২, ৬৪, ১২৮, ২৫৬, ৫১২, ১০২৪…
মনে থাকবে?
# থাকবে মামা। কিন্তু দুই কেন, পাঁচ হলে কি সমস্যা হত ?
% দুই কারণ, কম্পিউটার বাইনারী ছাড়া কিছু বুঝে না ।
# ও, বুঝতে পারছি। ব্যান্ডউইথ আর ইন্টারনেটের স্পীড কি একই জিনিস?
% একই বলা যায়।
ডাউনলোড শেষে, মামা গেম ইন্সটল করে দিচ্ছে আর আমার সাথে কথা বলছে-
% প্রতি সেকেন্ড কি পরিমান ডাটা আসা যাওয়া করতে পারবে তার পরিমাণকে ব্যান্ডউইথ বলে। ব্যান্ডউইথ বেশি হলে প্রতি সেকেন্ডে বেশি ডাটা আসবে৷ তোর ইন্টারনেট ফাস্ট মনে হবে। ব্যান্ডউইথ অনেকটা রাস্তার মত, রাস্তা চওড়া হলে একসাথে বেশি গাড়ি চলতে পারে।
# তোমার বাসার ব্যান্ডউইথ কত?
% আমার বাসার না, আমার বাসায় ব্যবহৃত ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যান্ডউইথ হল ১ জিবিপিএস মানে ১০২৪ এমবিপিএস।
# ওয়াও অনেক !! তিন সেকেন্ডই গেম ডাউনলোড হয়ে যেত।
% না এই ভুল সবাই করে।
# আমি আবার কি ভুল করলাম ?
% এই যে বললি ৩ সেকেন্ডে ডাউনলোড হয়ে যেত।
এরপর মামা হিসেব করে বের করল
% ২৪ সেকেন্ড লাগবে। তুই বিট বাইট বুঝিস?
# হুম, ক্লাসে পড়িয়েছে। ৮ বিটে ১ বাইট।
% সাবাস। তোদের ইন্টারনেটর ব্যান্ডউইথ কত যেন ?
# ৫৬ এমবিপিএস।
% ৫৬ কে ৮ দিয়ে ভাগ দে। দেখ কত হয়?
মোবাইলের ক্যালকুলেটর বের করে ভাগ দিলাম। মামা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, এত সহজ ভাগটাও আমি ক্যালকুলেটর দিয়ে করলাম তাই।
# মামা, ৭।
% তোর গেমের সাইজ কত?
# ৩ জি বি।
% ভালো করে দেখে বল –
# ৩৪৫৬ এমবি।
মামা তার মোবাইলে কি যেন লিখল-
% দেখত ঠিক আছে কিনা ? এটা তোর ফাইল সাইজ ৩৪৫৬ এমবি। আর এটা তোর ব্যান্ডউইথ ৫৬ এমবিপিএস।
# জ্বী মামা, ঠিক আছে।
ভাবলাম মামা মনে হয় কোন ম্যাথ করবে। তা না উল্টো আমাকে আবার ভাগ করতে বলল।
% নে, এইবার আবার ভাগ কর। ৩৪৫৬ কে ৭ দিয়ে।
# মামা প্রায় ৫০০, ৪৯৩.৭।
% কত মিনিট হয় ?
আবার আমি মোবাইলের ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব করে বললাম
# ৮ মিনিটের মত। একটু বেশি। কিন্তু এটা দিয়ে কি হবে ?
% কিছু হবে না। এবার দেখ, আমার ডাউনলোড করতে কত সময় লেগেছে।
# ১১ মিনিটের মত।
% বেশি লেগেছে কারণ, ডাউনলোডের সময় আমি আবার অন্যকিছু কাজ করছিলাম। এখন দেখ, কোন মিল পাস কিনা –
আমার কাছে পুরো বিষয়টা ধাঁধার মত লাগছে। শুরু থেকে মেলাতে থাকলাম। কিন্তু মাত্র ১০ মিনিট? আমার তো মনে হচ্ছিল ১ ঘন্টা। এই ১০ মিনিটেই মামা কত জ্ঞান দিল। আর ১ ঘন্টা হলে তো আমার খবরই ছিল ।
# মামা, আমার ব্যান্ডউইথকে ৭ দিয়ে ভাগ দিলাম আর কেমন করে যেন সব হিসাব মিলে গেল, ঘটনা কি ?
% ঘটনা টাও তুই জানিস। ঐ যে বিট বাইট।
# বুঝলাম না৷ কোনটা বিট, কোনটা বাইট?
মামা আবার শুরু করল-
আমরা যাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নেই তারা আমাদেরকে বিটে স্পীড/ ব্যান্ডউইথ বলে। কিন্তু কম্পিউটার সব হিসাব করে বাইটে। আর ৮ বিটে এক বাইট, তাই আমি ৫৬ কে ৮ দিয়ে ভাগ করে ৭ পেয়েছি। তার মানে ৫৬ Mbps আসলে, ৭ MBps। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে একটা B বড় , আরেকটা b ছোট। বড় B দিয়ে বাইট, আর ছোট b দিয়ে বিট বুঝায়। যেহেতু বাইটে বললে কম কম লাগে, তাই তারা বিটকে বাইটে কনভার্ট করে তারপর বলে। কথা শেষ হবার সাথে সাথে গেম ইন্সটলও শেষ। আর সাথে সাথে আমি গেম খেলতে শুরু করলাম।
[1] কোর-আই ১৩ (কাল্পনিক), কম্পিউটারের প্রসেসর
[2] অক্টা-ফাইভ ১.৫ (কাল্পনিক), কম্পিউটারের প্রসেসর
[3] এসএসডি (কাল্পনিক), কম্পিউটারের তথ্য সংরক্ষেনের যন্ত্র।
[4] এন এফ এস- ডেড কিং (কাল্পনিক)- কম্পিউটারে খেলা যায় এমন খেলা।
[5] হার্ডওয়্যার এসেম্বল, কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জোরা লাগানো ।
[6] চিপফুডের (কাল্পনিক), জনপ্রিয় খাবারের দোকান৷