সাইবার সিকিউরিটি – ৫

আমার কথা শেষ হতেই মামা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন৷ এতক্ষণ মনে হয় দম বন্ধ করে ছিলেন।

% কিরে? তোর না পাঁচ মিনিটের ভিডিও?

# কেন মামা, পাঁচ মিনিট হয় নাই? আবার দিতে হবে ?

% না না আর দিতে হবে না। পাঁচ মিনিট তো অনেক আগেই হয়েছে। এখন মনে হয় কাঁটতে হবে।

# না কাঁটতে হবে না৷ সর্বনিম্ন পাঁচ মিনিটের কথা ছিল, এর বেশি হলে সমস্যা নাই।

% হুম৷ শেষের দিকে মনে হয় একটু কেঁপে গেছে, ঠিক করে নিস।

# ওকে মামা৷ আর একটা কথা তোমাকে তো বলা হয় নি, মানিকের ই-মেইল পেয়েছি।

% কি অবস্থা ওর? মামা কি টাকা দিতে রাজি হয়েছে?

# হাহা, হুম রাজি হয়েছে। আরও অনেক ব্রেকিং নিউজ আছে…

% সেটা আবার কি ?

# ড্রিম শপ তো এখন ডিজিটাল ড্রিম শপ।

% কি রকম?

# মোফাজ্জল মামা দোকানের বাইরে ডিজিটাল সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। আর কাস্টোমারদের ট্যাব দেয়। এতে করে মামার অনেক ঝামেলা কমে গেছে আর বিক্রিও নাকি অনেক বেড়ে গেছে।

% আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর কি অবস্থা ?

# সেটাও অনেক ভালো।  অর্গানিক মার্কেটিং নাকি অনেক কাজে দিয়েছে। প্রতিদিন ১০/১২ টা অর্ডার পায়। আর এখন মোফাজ্জল মামা পেইড মার্কেটিং এ ও রাজি হয়েছে।

% ওয়াও !!! ড্রিম শপের নাম চেঞ্জ করে তো “দি নিউ ডিজিটাল ড্রিম শপ” রাখা উচিত।  হা হা হা…

#  কি করে বুঝলে? মানিক কিন্তু একই কথা বলেছে।  হাহাহা …

% বুঝলাম আর কি, বড় হলে তুই বুঝবি। আজ তাহলে যাই…

# মামা, আরেকটু পরে গেলে কি খুব সমস্যা হবে ?

% তা হবে না তবে সাতটার টার মধ্যে বাসায় থাকতে হবে।

# এখনো তো অনেক সময় আছে । অনেকদিন হল তোমার সাথে গেমজোনে খেলা হয় না। নতুন একটা গেম কিনেছি- “ডেড রান ইন জুরাসিক”। খুব মজার, তোমার ভালো লাগবে-

% খেলা যায়, তবে ৬ টায় বের হতে হবে, ওকে ।

# ওকে মামা।

এরপর আমি আর মামা, পলিমারের পোষাক [1] আর গ্লাস পরে নিলাম। পলিমারের ড্রেসটা টি-১৫ মডেলের সাথে নতুন এসেছে। একদম রিয়েল এক্সপিরিয়েন্স  পাওয়া যায়। গেমে ঘুষি লাগলে বা ব্যাথা পেলে, ঠিক সে জায়গায় ভাইব্রেট  করে। মনে হয়, সত্যি সত্যি ব্যথা পেয়েছি।

পোষাক আর গ্লাস পরে আমরা গেমজোনের প্লাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে গেলাম। এটাও চমৎকার। গেম শুরু হলে আমরা এর উপর হাঁটতে পারি, দৌঁড়াতে পারি। একদম বাস্তব! মনে হবে আমি যেন সত্যিই জুরাসিক পার্কে। খেলা শুরু করে দিয়ে দেখলাম একটু দূরে মামা দাড়িয়ে আছে। আমি মামাকে ডেকে, হাঁটতে হাঁটতে মামার কাছে গিয়ে মামার পিঠে হাত দিতেই মামা এক লাফে তিনহাত দূরে চলে গেল।

# কি হল , মামা ! এমন লাফ দিলা কেন ?

% পিঠে কি যেন হল !

# কিছু হয় নি, আমি হাত রেখেছি।

% তা তো দেখলাম, কিন্তু আমার পিঠে কি যেন হল।

# হাহা মামা, তুমি কি টি-১৫ এ আগে খেল নাই ??

% না, খেল। এই গেম তো খেলি না তবে বাসায় একটা আছে, ঐটা এম-১০ মডেলের।

# এম-১০ তো অনেক আগের। তুমি আজ অনেক মজা পাবা৷ হি হি।

এরপর আমি আর মামা একটা ম্যাপ দেখে নিলাম৷ আমাদেরকে পাহাড়ের ভিতরের গুহা থেকে একটা চাবি উদ্ধার করতে হবে। করতে পারলে আমি একশ পয়েন্ট পাব। আমি মামাকে পুরো বিষয়টা ব্রিফ করলাম। আমাদেরকে মারার জন্য অনেক ছোট বড় ডাইনোসর আসবে। বড়গুলো আমরা মারতে পারব না, আর ছোটগুলো মারতে পারলেও মারা ঠিক হবে না । কারণ এতে বড়গুলো রেগে যাবে। আমাদের দুজনের কাছেই কে-২ বন্দুক আছে। তবে এটা ব্যবহার না করাই ভালো। আমরা ঝোপঝাড় কাটার জন্য একটা ছুরি নিতে পারি কিন্তু এরজন্য আমাদের পাঁচ পয়েন্ট খরচ হবে।

মামা অল্পতেই বুঝে গেল।

          % এই বন্দুক দিয়ে কি হবে? আমাকে একটা ছুরি কিনে দে।

আমি মামাকে দেখিয়ে দিলাম কিভাবে ছুরি নিতে হয়। এরপর আমরা অভিযানে নেমে পড়লাম। মামার প্ল্যান মত কাজ করে এই প্রথমবারের মত চাবি উদ্ধার করতে পেরেছি। মাঝে মাঝে মামা যেভাবে চিৎকার করেছিল মনে হচ্ছিল মামা মনে হয় সত্যি সত্যি ব্যথা পাচ্ছে।  

মামাকে দেখে মনে হচ্ছে মামা খুব মজা পেয়েছে।

# মামা, তুমিও একটা কিনে ফেল। তারপর দুইজনে খেলা যাবে ৷ ভার্চুয়ালী কানেক্ট হয়েও টিম করে খেলা যায়।  

% জিনিসটা ভালো লেগেছে৷ মজা লেগেছে, ভয়ও পেয়েছি। দেখি চিন্তা করে।

# আরে খুব মজা হবে, কিনে ফেল। ইমি আপু ডেড রান খেলতে চায় না, ভয় পায়। লং টেনিস খেলে।  আরে এটা কি টেনিস খেলার জিনিস নাকি ?

% হুম, খুব সাহস! একদিন ধরে বাঘের খাঁচার ভিতরে দিয়ে আসলে দেখা যাবে কার কেমন সাহস! দেখ কয়টা বাজে…

# মামা, তোমার মনে হয় একটু দেরি হয়ে গেছে। ৬ টা ১৭ বেজে গেছে।

% সর্বনাশ। তুই খেল আমি যাই। পরের সপ্তাহে দেখা হবে। তোর আম্মু কই রে?

# মনে হয় রান্নাঘরে। রাতের রান্নার মেন্যু সেট করে দিচ্ছে।

মামা আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

% আপা, আজ যাই৷ বৃহস্পতিবার চলে আসব।

~ যাই মানে ? আমি আবার তোর জন্য মুরগীর স্লাইস এনে পিট কে বললাম রান্না করতে।

 আমি আমার রুম থেকে মামার আর আম্মুর কথা শুনছি। আম্মু নিশ্চয়ই চিকেন ফ্রাই করবে। তাই মুরগীর স্লাইস এনেছে। মুরগীর স্লাইস বললেও এইগুলা আসলে মুরগী না। ফাইবার দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা। এখন সবই এরকম হাইব্রিড ফুড [2]। আর পিট [3] হল আম্মুর শেফ৷ আম্মু শুধু পিট কে বলে দেয় কখন কি লাগবে, আর পিট সব রান্না করে ফেলে। আর কিছু শেষ হয়ে গেলে, পিট আগেই এলার্ম দিয়ে দেয় এবং ই-মেইলে আম্মুকে লিস্ট পাঠিয়ে দেয়।

% না আপা, আজ দেরী হয়ে গেছে। তুমি এগুলা ইমু কে দিয়ে দিও।

~ বেশি সময় লাগবে না …

% না না, আমি গেলাম৷ সামনের সপ্তাহে অনেক খাব, এখন যাই।

এরপর মামা বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমি কালকের স্কুলের হোমওয়ার্ক গুলো শেষ করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।  

যাক আরো একটা শনিবার গেল!


[1] পলিমারের পোষাক (কাল্পনিক), ভিডিও গেম খেলার সময় শরীরের স্পর্শ বাস্তব মনে হয়।

[2] হাইব্রিড ফুড (কাল্পনিক)- কৃত্রিমভাবে তৈরি খাবার

[3] পিট(কাল্পনিক)- রান্না করার রোবট

আরো গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published.